@mbabane
হাতে কোন কাজ নেই। দুপুরের রোদ গড়িয়ে বিকেলের স্নিগ্ধতা নামছে। হেঁটে যাচ্ছি একটা পার্কের পাশ দিয়ে। ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে হচ্ছেনা। ফুটপাতে তেমন লোকজন নেই এলাকাটা ভি আই পি বলে রিক্সা নেই শুধুই গাড়ী কিংবা সিএনজি চলছে। পায়ে হাঁটা মানুষও খুব কম। বন্ধুরা বিছিন্ন হয়ে আছি আমরা কোথায় যাব কোন গন্তব্য নেই। হঠাত দিক পরিবর্তন করে ঢুকে পড়লাম মন্ত্রী পাড়ায়। এখানকার পরিবেশটা দারুন। স্বাস্থ্য সচেতন কিছু মানুষ বিকেলের শুরুতেই ফুটপাতে নেমেছে। সবাই চায় শরীরকে সূস্থ্য রাখতে। আমিও হাঁটছি কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য নয় কিসের জন্য তাও জানিনা! হেঁটে হেঁটে চলে এলাম বেইলী রোডের চৌরাস্তার মোড়ে। ডান দিকে কাকরাইল মসজীদ বাঁ দিক চলে গেছে বড় মগবাজারের দিকে। রাস্তা পাড় হয়ে বেইলী রোডের রাস্তার ফুটপাতে উঠে হাটতে শুরু করলাম বাম পাশে কলোনী। হঠাত দাঁড়িয়ে পড়লাম একটা দৃশ্য দেখে। একজন বুড়ো মানুষ খুব যত্ন করে একটা গাছে্র চারা লাগাচ্ছে ফুটপাতের ঠিক পাশেই কলোনীর ফেঞ্চ এর ভিতরে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, লোকটি খুব যত্ন করে একটা গর্ত খুড়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে সম্ভবত কম্পোস্ট মাটি সেই গর্তে ঢাললো তারপর ছোট্ট একটা চারা গাছ সেই গর্তে বসিয়ে দিলো এতক্ষন লোকটির চেহারার দিকে তাকাইনি তার কাজ দেখছিলাম। সে নিখুঁতভাবে গাছের চারা বুনছিলো মনে হচ্ছে উনি বেশ ভালভাবেই জানে কি করে গাছের চারা বুনতে হয়। চারাটা গর্তে রেখে উনি একটু দূরে গিয়ে লক্ষ্য করতে থাকলেন যে গাছের চারাটা কি সোজা করে লাগানো হল কিনা! ফিরে এসে আবার গাছের চারাটা একটু ঠিকঠাক করে আবার দূরে গিয়ে লক্ষ করে বেশ একটা তৃপ্তির চেহারা নিয়ে ফিরে এসে মাটি দিয়ে ভরাট করে অল্প একটু পানি ছিটিয়ে দিয়ে সরাসরি আমার দিকে তাকালেন। আমি আসলে ভাবতেই পারিনি উনি আমায় লক্ষ্য করেছেন! আমার দিকে তাকিয়ে উনি জিজ্ঞাসা করলেন জীবনে কখনো গাছের চারা বুনেছো? আমি একটু অপ্রস্তুত হয়েই বললাম হ্যাঁ বুনেছি! উনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন কয়টা বুনেছো? আমি বললাম দুই তিনটা হবে! উনি বললেন, তাও ভাল। আমিত ভেবেছিলাম তুমি বলবে একটাও না। এই যে দেখছো গাছের চারাটা বুনে দিলাম এটা আমার জীবনের তিন হাজারতম গাছের চারা আর তুমি হচ্ছো এই তিন হাজারতম গাছের চারা বুনে দেবার শাক্ষী। আমি হেসে বললাম, আমি আর কি শাক্ষী, যে গাছ আপনি বুনলেন সেই আজীবন শাক্ষী হয়ে রইল। বুড়ো লোকটি গাছ লাগানোর সরঞ্জাম নিয়ে ঘুরে দাড়ীয়ে চলে যেতে যেতে বলল যে দুই হাজার নয়শত নিরানব্বইটি গাছের চারা আমি বুনেছি তার কয়টা জীবন্ত হয়ে আকাশের পানে উঠে গেছে তার কোন শাক্ষী নেই, আমিও আর দেখিনি তাদের, জানিনা তারা বড় হয়েছে কি মরে গেছে। বৃদ্ধ কথাগুলো বলতে বলতেই চলে গেলেন। আমি আবার হাটঁতে থাকলাম বেইলী রোডের ফুটপাতে। মনে মনে ঠিক করলাম যত বছর বাঁচব প্রতি বছর অন্তত একটা করে গাছ লাগিয়েও যদি যাই তাই বা কম কি! মানুষ মরে যায় কিন্তু একটা গাছ বেঁচে থাকে অনেক অনেক বছর।
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।