এক কাপ কফি মানেই নিমিষে নিজেকে চাঙ্গা করে তোলার জাদুর পেয়ালা। সচরাচর বয়ামে থাকা কফি দিয়ে কিংবা ‘ইনস্ট্যান্ট কফি’ তৈরি করা হয় বাসায়। গরম পানির সঙ্গে কফির গুঁড়া ও দুধ মেশালেই কফি বানানো যায়। এটা একটা উপায় হতে পারে, তবে কফির আসল রেসিপি কিন্তু পুরোটাই এর বিপরীত। কফির রেসিপি রয়েছে হরেকরকম, নানান স্বাদের কফির প্রাচুর্য্য লক্ষ্য করা যায়, বিশেষ করে, কফি দিয়ে প্রস্তুত করা এসপ্রেসো, কাপাচিনো এবং লাৎটে তো খুবই জনপ্রিয়। কফি পানের নানা রকম দোকান আজকাল আশপাশেই পাওয়া যায়। নানা নামে বিক্রি হচ্ছে নজরকাড়া কফি। বাইরে যেকোনো কফি শপে এসপ্রেসো যন্ত্র দিয়ে বানিয়ে দেবে ক্যাফে লাতে, ক্যাফে মোকা, কাপ্পুচিনোসহ নানা রকম কফি। চাইলে এসব কফি ঘরেই বানাতে পারেন।
বাইরে যেকোনো কফি শপে এসপ্রেসো যন্ত্র দিয়ে বানিয়ে দেবে ক্যাফে লাতে, ক্যাফে মোকা, কাপ্পুচিনোসহ নানা রকম কফি। যদিও বাসায় হুবহু কফি শপের মতো কফি তৈরি করা যায় না বললেই চলে, কিন্তু কাছাকাছি তো যাওয়া যাবে। আর বাসায় যদি একটা কফি মেকার, কফি বিন গ্রাইন্ডার আর কফি বানানোর নিত্য নতুন গ্যাজেটগুলো থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই, কফি মেকার কফি বানানোর কাজটি করে দিবে খুব সহজে। আর কিচেন গ্যাজেটগুলো আপনি হাতের কাছের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরেই পেয়ে যাবেন, দামও এমন কিছু আহামরি নয়। আরো সহজ উপায় হলো, আজকের ডিল, অনলাইন শপিং সাইট ঘুরে সেখান থেকেই পছন্দমত অর্ডার দেয়া। কফি বানানোর জন্য সকল কিছুই সেখানে আপনি পেয়ে যাবেন।


বাসায় সত্যিকারের কফির স্বাদ পেতে ‘ফ্রেশ গ্রাউন্ড কফি’ ব্যবহার করতে হবে। এর জন্য রোস্টেড কফি বিন গুঁড়া করতে হবে। কফি বিন গুঁড়া করার জন্য লাগবে ‘কফি বিন গ্রাইন্ডার’। হাতে গুঁড়া করার জন্য কেনা যেতে পারে ম্যানুয়াল গ্রাইন্ডার। এর ব্যবহারে কোনো বিদ্যুতের দরকার হয় না। কফি বিন গ্রাইন্ডারের মধ্যে রোস্টেড কফি বিন দিয়ে হাতল ঘোরালেই পেয়ে যাবেন কফি বিনের গুঁড়া। কফি বিন গুঁড়া হয়ে গেলে আপনি নানাভাবেই বিভিন্ন রকমের কফি বানাতে পারবেন। চলুন বিশ্বজুড়ে বহুল প্রচলিত কিছু কফির রেসিপি জেনে নেই।
ক্যাফে মোকা
ক্যাফে মোকা বানাতে হলে আপনাকে ৩০ মিলিলিটার এসপ্রেসো, ১৫ গ্রাম চকলেটের গুঁড়া এবং ২০০ মিলিলিটার ঘন ফুটানো দুধ মেশাতে হবে। আপনি যদি চকলেটের স্বাদ প্রবলভাবে চান, তবে পরিমাণমতো চকলেটের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে হবে। ক্যাফে মোকাতেও ক্যাফে লাতের মতো ১ থেকে দেড় সেন্টিমিটার দুধের ফেনা থাকবে। যার ওপরে চকলেটের গুঁড়া দিয়ে মনমতো নকশা করে ফেলতে পারেন।
ব্ল্যাক কফি
গ্রাইন্ডার দিয়ে কফি গুঁড়া করে বাসায় একটি ‘কফি প্লানজার’ ব্যবহার করে ব্ল্যাক কফি তৈরি করতে পারবেন। কফি প্লানজার দিয়ে ৩ কাপ কফি বানাতে হলে লাগবে ৩৫০ মিলিলিটার ফুটানো পানি এবং ৫০ গ্রাম কফির গুঁড়া।
প্রথমে কফি প্লানজারের মধ্যে কফির গুঁড়া রেখে তাতে গরম পানি ঢেলে নাড়তে হবে। কফি প্লানজারে হাতলটা ওপরের দিকে টেনে ৪ থেকে ৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধীরে ধীরে হাতলটা নিচের দিকে নামালেই তৈরি হয়ে যাবে ‘ব্ল্যাক কফি’।
ইতালিয়ান এসপ্রেসো
কফি শপের মতো যন্ত্র ছাড়া বাসায় এসপ্রেসো বানাতে হলে আপনার লাগবে একটি স্টোভ টপ যন্ত্র। প্রবল চাপের মাধ্যমে গরম পানি দিয়ে যখন কফি গুঁড়ার ভেতরের নির্যাস বের করে আনা হয়, সেটাকে বলা হয়ে ইতালিয়ান এসপ্রেসো। স্টোভ টপ যন্ত্রের নিচের অংশে বা চেম্বারে পানি ভরে এর ওপরের ফিল্টারে কফির গুঁড়া ভরতে হবে। তার ওপরের কাপটি নিরাপদভাবে আটকে দিয়ে স্টোভ টপ যন্ত্রটিকে চুলার ওপরে রেখে দিতে হবে। ১ কাপ এসপ্রেসো শটের জন্য ৮ গ্রাম কফির গুঁড়ার নিচে ৮০ মিলিলিটার পানি দিয়ে স্টোভ টপটি চুলার ওপরে ৪ থেকে ৫ মিনিট রেখে দিতে হাবে। ওপরের অংশে কিছুক্ষণের মধ্যেই জমে যাবে কফি গুঁড়ার খাঁটি নির্যাস। যার নাম ইতালিয়ান এসপ্রেসো।
ক্যাফে লাতে
ক্যাফে লাতে তৈরি করতে আপনাকে এসপ্রেসো বানাতে হবে আগে। ৩০ মিলিলিটার এসপ্রেসোর সঙ্গে ২২০ মিলিলিটার দুধ মেশাতে হবে। ক্যাফে লাতের ওপরে ১ থেকে দেড় সেন্টিমিটার দুধের ফেনা (মিল্ক ফোম) থাকতে হবে। কফি শপগুলোতে এই ফোম তৈরি করা হয় দুধের মধ্যে দিয়ে উচ্চ চাপের সঙ্গে বাষ্প প্রবাহিত করে। কিন্তু বাসায় ক্যাফে লাতে তৈরি করার সময় দুধের ফেনা বানানোর জন্য বাজার থেকে ক্যাফে লাতে ফোম তৈরির যন্ত্র কিনে নিতে হবে। ফোম ছাড়া এই কফি পান করলে মনে হবে যে কোনো সাধারণ দুধ কফি পান করছেন।
ক্যারামেল লাতে
ক্যাফে লাতের সঙ্গে ১৫ মিলিলিটার ক্যারামেল সিরাপ ব্যবহার করতে হবে। ক্যারামেল সিরাপ ১৫ মিলিলিটার থেকে পরিমাণমতো কম-বেশি ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো স্বাদ নিতে পারেন। ক্যারামেল লাতের ওপরেও ১ থেকেদেড় সেন্টিমিটার ফেনা থাকবে। যার ওপরে আপনি ক্যারামেল সস দিয়ে মনমতো নকশা করে নিতে পারবেন।
তো শিখিয়েই তো দিলাম নানান স্বাদের কফি সহজেই বানানোর কৌশল, এবার নিশ্চয়ই আপনাদের নিজের হাতে বানানো এক কাপ কফির দাওয়াত আমি পেতেই পারি :)