@Fahim
কঠিন এ বাস্তবতা কি করে মানি? তবুও মানতে হয়। উচ্ছল উত্তাল এই জীবনসাগরে উত্থান পতন থাকবে, সুখ দুঃখ পাশাপাশি একূল ওকূল স্পর্শ করে বইবে। সবই যেন স্বাভাবিক কিন্তু যে মানুষটিকে এই তো কিছুক্ষণ আগে বিমানবন্দর থেকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফেরার পথ ধরা হলো মাত্র, তার একটুকু পরেই ইন্টারনেটে শোকের খবর! এ ভাবতেও যেন মাথার মগজের নিউরনে সাড়া পেতে সময় নেয়। বিমানের ভেতরে কতই না উৎফুল্লতা ছিল। কেউ ছিল হানিমুনের উদ্দেশ্যে, কেউ প্রমোদ ভ্রমণ, কেউ ব্যবসা আবার কেউ হয়তো ছুটির সময়টাকে ফ্রেমে বেঁধা নেয়ার বাসনা। সব শেষ!
অবতরণের কয়েক মিনিট আগে যার যার প্রিয়জনের অতি মায়াময় মুখগুলো আর্তচিৎকার আর ভয়ার্ত গোঙ্গানীতে ফেটে পড়ছিল। অপরদিকে লেলিহান মরণ আগুনের শিখা গ্রাস করছিল গ্রীবা, মগজ, হাত, পা, পেট, পুরো শরীর। নিজের শরীরে সে আগুন নিজেরই শরীরের চর্বির তেল পেয়ে জ্বলছিল বহুগুনে। কত যত্ন করে কিছুক্ষণ আগেই মুখে হাতে পায়ে করা হয়েছিল কোমল বা ভারি মেকআপ, পেডিকিউর, মেনিকিউর, ফেসিয়াল। চোখের সামনেই আগুনের প্রচন্ড আক্রমণে সব বিষ হয়ে মরণ যন্ত্রণায় রূপ নিলো।
এ মৃত্যু বড় বেশি বেদানায়ক। বড় বেশি আচানক অসময়ে বিড়ম্বনা ছড়ালো। সে মুহূর্তে তোমাদের কেমন অসহায় মনে হয়েছিল কতটা ভয়ঙ্কর ছিল সে মরণ তা অনুভব করতে পারছি। তোমাদের জন্য অনেক প্রার্থনা। অনেক প্রার্থনা। সকল যন্ত্রণা সয়ে তোমরা যে মরণ মুহূর্ত পাড়ি দিয়ে পরপারে চলে গেছ, সেখানে যেন অপার সুখ তোমাদের উপহার দেয়া হয় –এই কামনা।
'ভাষা' তৈরী হয়েছিল সহজ ভাবে একজনের কথা আরেকজন যাতে বুঝতে পারে তার জন্যI 'হরফ' তৈরী হয়েছিল যাতে সামনে সামনি না থাকলেও কাগজে বা অন্য মাধ্যমে লিখে অন্যকে সেই কথা পৌছে দেওয়া যায় I
এরই ধারাবাহিকতায় আজ কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার কি সহজে আর কত দ্রুততায় 'হরফ' দিয়ে (টাইপ করে) নিজেদের কথা লিখি আর ছড়িয়ে দেয় সবার জন্যI
কিন্তু একবার চিন্তা করুন - আমাদের মতো দেশের কত জন লোক আসলে লিখতে পারে? ভিনদেশি ভাষায় তো দূরের কথা, নিজের ভাষাতেই কয়জন তার মোবাইল ব্যবহার করে ভালো করে তার মনের মাথা লিখতে পারে?
প্রযুক্তিকে আমরা এই 'লিখার সীমাবদ্ধতা'-র বন্ধনে আর কতদিন বেঁধে রাখবো?
ভালো সংবাদ হচ্ছে যে দেরিতে হলেও গত কয়েক বছরে নতুন প্রযুক্তি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে এই বাধা উত্তরণের উপায়I 'কথা বলে লেখা' (Speech to Text) যা আগে ছিল গুটিকয়েক ভাষার জন্য, তা এখন 'বাংলা'-তেও আছে , ভালো ভাবেই আছে I
আসুন - সবাই আমাদের নিজেদের মোবাইলে 'কথা বলে বাংলা লেখা' ফিচার ব্যবহার করি এবং অন্যদেরকেও উৎসাহিত করি I
পুনশ্চ: একটি লিংক দিলাম I কিভাবে যেকোনো এন্ড্রোইড ফোনে কথা বলে বাংলা লেখার ফিচার চালু করা যাবে সেই নিয়ে রাকিব ভাই সুন্দর একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী করছে I
https://www.facebook.com/mltraining/videos/703865239822821/?hc_location=ufi
আমরা যারা মানবতাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও সংখ্যালঘু নির্মূলীকরণ (Ethnic cleansing) ক্রাইসিস হিসাবে দেখছি তারা কি এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কৌশলগত ভাবে কোনো চিন্তাশীল উদ্যোগ নিচ্ছি? শুধু ফেসবুকে নির্মমতার নিউজ শেয়ার করলেই কি কোনো কিছু পাল্টাবে?
দুটি চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হবে এই নির্মমতা থামানোর জন্য আদৌ কোনো ধরণের অবদান রাখার জন্যI
১/ প্রথমটি অভ্যন্তরীণ - আমাদের দেশে এখনো অনেক লোক মনে করে রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বোঝা, শুধু বোঝা না- এরা মূলধারা সমাজের সাথে মিশে অনেক ধরণের ক্ষতি করছেI এই ধারণার পিছনে অনেক ফ্যাক্টও আছেI কিন্তু তাদেরকে বোঝাতে হবে যে কোনো কোনো রোহিঙ্গার খারাপ কাজের জন্য সব রোহিঙ্গাদের ঢালাওভাবে সন্ত্রাসী বলা অমানবিকI ৭১-এ বাংলাদেশের অনেক শরণার্থী কলকাতায় অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছিল, তার পরেও মানবিক কারণে পশ্চিম বাংলার জনগোষ্ঠী আমাদের শরণার্থীদের গ্রহণ করেছিল, ফিরিয়ে দেয় নিI ইউরোপে সন্ত্রাসী আক্রমণের হুমকির মুখেও জার্মানি লাখ লাখ সিরিয়ার শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে মানবিক কারণেI আমরা যদি নিজেদের মানবিক বলে দাবি করি, তাহলে এই অসহায় মানুষগুলিকে (যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু) ফিরিয়ে দিতে পারি নাI
২/ দ্বিতীয়টি আন্তর্জাতিক- যদিও গত কয়েকদিনে পশ্চিমা মিডিয়ায় রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের খবর আসছে (অনেক দেরিতে হলেও), তারপরেও আন্তর্জাতিক মহলে একটি ধারণা আছে যে রোহিঙ্গারা একটি সন্ত্রাসী ও বিছন্নতাবাদী গোষ্ঠী- এবং এই সমস্যা মায়ানমার সরকারের একটি অভ্যন্তরীন ব্যাপারI আমরা সবাই জানি এই ধরণের 'পার্সেপশনের'-এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও কূটনৈতিক প্রভাবI সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে প্রতিবেশী দুটি বৃহৎ রাষ্ট্র (চীন ও ভারত) নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে মায়ানমার সরকারের এই নির্মমতার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ থেকে এর বৈধতা তৈরী করে দিচ্ছে (দুটি প্রাসঙ্গিক লিংক দিলাম শেষে)I
যদিও এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নেবার কথা (জাতিসংঘ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাবহার করে, বা ভারত- চীনের সাথে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে), তারপরেও আমরা দেখছি আমার কাছে মনে হয় সরকার এই ব্যাপারে কি ভূমিকা নিবে তার সম্পর্কে নিশ্চিত নাI
এই প্রেক্ষিতে আমাদের সমাজের মানবতাবাদীদের কি করার আছে? প্রথমত দেশের ভিতরে এবং বাহিরে জনমত তৈরী করাI দেশের ভিতরে হয়তো হয়েছে, কিন্তু বাহিরে যথেষ্ট হয়েছে বলে মনে হয় নাI আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের যে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থান করছে, তাদের প্রগতিশীল অংশের (ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী) একটি বড় ভূমিকা নেবার সময় এসেছেI দেশের ভিতরের থেকে বাহিরের লোকেরা সেই সমাজের এবং সেই সকল দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সাথে বেশি সংযুক্তI তাদের প্রধান কাজ হবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাI
পরিশেষে বলতে চাই - রোহিঙ্গা সমস্যা একটি মানবিক সমস্যাI এটিকে শুধু ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে আসুন মানবিক দৃষ্টিতে দেখিI
http://www.prothom-alo.com/…/ar…/1311996/রোহিঙ্গা-নিয়ে-দুই-‘বড়-ভাইয়ের’-ভাবনা-কী
http://www.ndtv.com/…/exclusive-government-s-doublespeak-on…
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।