@Razunir
কখনো ভালোবাসি না শোনা মেয়েটাও
বছরের পর বছর
প্রতিক্ষায় থাকে।
তারপর একদিন অপেক্ষার পথ ছেড়ে
সেও হয়তো শক্ত হাতে জীবন গোছায়
বুকের গহীন তিরতিরে বয়ে চলা নদীটা
শুকায়না কখনো
লুকিয়ে থাকে গহীনে, গোপনে
রিমঝিম কাঁচের চুড়িগুলো হয়ত
আর হাতে পড়া হয়না
কিন্তু চুরি ভাঙ্গার যন্ত্রণাটা
মাথার ভেতরে ঠিকি গেঁথে থাকে।
সেই যে সেদিন ভিড়ের ছুতায়
আলতো ছুঁয়ে দিয়েছিলো কেউ
সেই গা ঘিনঘিনে অনুভুতিও
সে মাথায় সাজিয়ে রাখে যত্নে ।
আনমনা কোন বিকেলে
তার ঠিকি ইচ্ছে হয়
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে।
ইচ্ছেগুলো সামনে আসার আগেই
চাপা দিয়ে দেয় খুব গোপনে।
মেয়েরা সব সাজিয়ে রাখে
মনের প্রকোষ্ঠে।
যে আঘাত আপনি মনেও রাখেননি
সে হয়তো এখনো কাঁদে সে কথা ভেবে,
যে হাত সে পায়নি কখনো
হয়তো এখনো হাতড়ে খোঁজে ,
রোজ বিকেলের চায়ের কাপে
হয়তো মিশে থাকে
একটুকরো দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়া ।
পবিত্র কুরআন হচ্ছে একমাত্র গ্রন্থ যেটা বিজ্ঞান সম্মত । তাই জেনে নেই আসলে ইসলাম বলেছে দাড়ি রাখার কথা বিজ্ঞান কি বলে দেখিঃ
দাড়ি রাখা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? নাকি আপনার মুখভর্তি দাড়ি আসলে নানারকম রোগ-জীবাণুর এক বিরাট আস্তানা? এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বিজ্ঞানী আর গবেষকদের মধ্যে।
বিবিসির এক অনুষ্ঠান, “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” সম্প্রতি ঠিক এই প্রশ্নে একটা ছোট্ট পরীক্ষা চালিয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্লিন শেভড পুরুষের চেয়ে দাড়িওয়ালাদের মুখে রোগ-জীবানু বেশি, এমন কোন প্রমাণ তারা পাননি। যারা দাড়ি রাখেন, তারা এর মধ্যে নানা রোগ-জীবাণু বহন করে চলেছেন এমন ভয় অনেকের মধ্যেই কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতাল সম্প্রতি এ নিয়ে গবেষণা চালায়। তাদের গবেষণার ফল অনেককেই অবাক করেছে।
‘জার্নাল অব হসপিটাল ইনফেকশনে’ প্রকাশিত এই গবেষণার ফলে বলা হচ্ছে, দাড়িওয়ালাদের চেয়ে বরং দাড়ি কামানো পুরুষের মুখেই তারা বেশি রোগ-জীবাণু পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, মেথিসিলিন-রেসিস্ট্যান্ট স্ট্যাফ অরিয়াস (এমআরএসএ) বলে যে জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী, সেটি দাড়িওয়ালাদের চাইতে দাড়ি কামানোদের মুখে তিনগুণ বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে।
এর কারণ কি?
গবেষকরা বলছেন, দাড়ি কামাতে গিয়ে মুখের চামড়ায় যে হালকা ঘষা লাগে, তা নাকি ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অন্যদিকে দাড়ি নাকি সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। বিবিসির “ট্রাস্ট মি, আই অ্যাম এ ডক্টর” অনুষ্ঠানে বেশ কিছু পুরুষের দাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমূনা সংগ্রহ করে একই ধরণের পরীক্ষা চালানো হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের গবেষক ড: অ্যাডাম রবার্ট এই গবেষণার ফল দেখে বলছেন, দাড়িতে এমন কিছু ‘মাইক্রোব’ আছে, যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে।
স্কুল থেকে বেরিয়ে বাসের জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের গার্জিয়ানসহ আরও অনেকেই। জাবালে নূর দুই বাসের প্রতিযোগিতায় এক বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উঠে গেলো তাদের উপর। স্পটেই প্রাণ গেলো তিন শিক্ষার্থীর! ১০ জনের মতো আহত। রেডিসনের সামনে এখন স্থানীয় জনতা ও শিক্ষার্থীরা পথরোধ করে ভাঙচুড় করছে, চলছে প্রতিবাদ। ঢাকায় একের পর এক এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এখন প্রতিবাদের ঝড়।
কিন্তু আমরা এই প্রতিবাদ কার কাছে জানাচ্ছি? মন্ত্রী-মিনিস্টারদের কাছে? বড় বড় আমলাদের কাছে? কিন্তু তাদের সন্তান বা নাতি পুতিদের তো কখনই এভাবে রাস্তার পাশে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি, হবেও না। তাহলে তারা কি এই সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে পারবেন? বা পারেন কখনও?
জ্যামে পড়ে আমাদের কতোটা সময় নষ্ট হয়। কতোগুলো এম্বুল্যান্সের ভেতরে রোগীদের স্বজনরা আটকা পড়ে ছটফট করতে থাকেন, কতোগুলো গুরতর আহত মানুষ হসপিটাল যেতে যেতে পথেই মারা যান। যারা কোনোদিন জ্যামে পড়েননি এবং পড়বেও না, তারা কি সে যন্ত্রণাটা কিঞ্চিত উপলব্ধি করতে পেরেছেন কখনও?
তারা কখনও চিন্তিত হন এভাবে যে, আমার ছেলেটা বা নাতিটা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে তো? রাস্তায় কোনো বাস চাপা দেয়নি তো? এভাবে কি তারা কোনোদিন ভেবেছেন? আমি জানি না। এসব বাস চাপা, দুর্ঘটনা, মৃত্যু, ধর্ষণ তাদেরকে কি আসলেই কখনও চিন্তিত করেছিলো? নাকি উপদেষ্টার শেখানো বয়ান মিডিয়ার সামনে দিয়ে তারা দায় ঝেরে ফেলেন?
আপনি পাঁচটা কাচামরিচ চিবিয়ে খেয়ে মুখ লাল করে ঘামে ভিজে আরেকজনকে যতোই লিখে আর চিৎকার করে ঝালের বিবরণ দেন না কেনো! মরিচে কামড় না দেয়া পর্যন্ত কেউ আসলে বুঝতে পারবে না, ঝাল ব্যাপারটা কেমন! বরং যে কখনও মরিচে কামড় দেয়নি, তারকাছে মনে হতে পারে, দু একটা মরিচে কামড় দিলে কী এমন হয়ে যায়!
আমরা তাই সারাজীবন ঝাল খেয়ে এভাবে প্রতিবাদই করে যাবো, ঝাল ঝাল বলে চিৎকার করে যাবো। কিন্তু যারা কখনও ঝাল খায়নি, তাদেরকে কখনও ঝালের ভয়াবহতা বুঝাতে পারবো না আমরা। তারাও কখনো ঝাল খেতে আসবেন না আমাদের সাথে। তাদের ঝাল খেতে হয় না। ঝালের পাশ দিয়েও যেতে হয় না তাদের..
এপিজে আব্দুল কলাম বলেছিলেন ইংরেজীতে Fail অর্থ First Attempt in Learning অর্থাৎ শিখার প্রথম ধাপ,
.
আমরা সবাই জানি ইংরেজীতে আরো একটি শব্দ NO অর্থ Next Opportunity 'আরেকটি সুযোগ'
.
ইংরেজ জাতি কেনো আজ এতো এগিয়ে,
.
Impossible কে ওরা বলে l M Possible 'আমার দ্বারা সম্ভব'
.
End কে ওরা বলে Effort Never Dies 'প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই'
.
জীবন সফল হতে হলে বউ বানাতে হবে কারণ Wife অর্থ Worries Invited For Ever(খাল কেটে কুমির আনা) তারপর তাকে নিয়ে নতুন উদ্যমে খেলতে শিখা Wife আরেকটি অর্থ Wonderful Instrument For Enjoyment
.
এক সময় বাঙ্গালী জীবনে বউ ছাড়া মজা করার কোন ইস্যু ছিলো না তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো দ্বিগুণ!
.
সত্যি বলতে কি,
.
ওস্তাদ বা'য়ে প্লাস্টিক যেমন গাড়ি চালককে সচেতন করে তেমনি 'ওস্তাদ ঘরে বউ আছে' আপনাকে কর্মমুখী কিংবা সচেতন করবে!
.
বউ হলো উপরের শব্দগুলোর মতো, যখন সে আপনাকে বলবে 'মেনে নিলাম আমি ভুল তাহলে শুদ্ধটা কি?' আপনি বলুন, 'তুমি শুদ্ধ বলেছো বরং আমি যেটা বলেছি সেটা ভুল'
.
এটাকে বলে 'বিপরীত মেথোড'
.
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শোভাকলোণীর এক ভাই এই মেথোড কাজে লাগিয়ে সুখী হয়েছেন,
.
একবার তার বউ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার সাথে কাটানো ১০ বছর তোমার কি অনেক দীর্ঘ সময় মনে হয়েছে? সে বললো আরে না! মনে হয়ে মাত্র ০১ বছর!
.
আমার পিছনে ১০০০ টাকা ব্যয় করার পর তোমার ফিলিংস কেমন হয়? স্বামী উত্তর দিলো, মাত্র ০০০১ টাকা ব্যয় হয়েছে এমন!
.
কারণ বউরা একটু ঘাড় ত্যাঁড়া হয়! আপনি কখনো জিততে পারবেন না এমনকি বিচারও!
.
বিচারক বলছে, আপনি এতো কিছু থাকতে আপনার স্বামীকে চেয়ার ছুঁড়ে মারলেন কেনো? বউ উত্তর দিলো, 'টেবিলটা এতো ভারী যে আল্গাইতে পারতেছিলাম না তাই'
.
তাই জগতে বিখ্যাত ব্যক্তিরা বলেছেন, বিয়ে হলো সবচেয়ে কঠিন সিন্ধান্ত!
.
যে এই সিন্ধান্ত নিতে পারে সে পৃথিবীর জয় করারও ক্ষমতা রাখে! বউ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মোটিবেশন!
রমজান এল গেল, ঈদও চলে গেল। দুয়ারে ফুটবল বিশ্বকাপের দৌড়াদৌড়ি চলছে। অনেকদিন কিছু প্রকাশ করা হয় না তবে পড়া হয়। পড়তে আমার ভাল লাগে, জানতে ভাল লাগে। সেই ভাল লাগা থেকেই নতুন কিছু অংশ আপনাদের মাঝে দিতে এসেছি। ঈদের দিন কাজ থাকায় শুভেচ্ছাটা দিলাম না। কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর থেকে ঈদের আনন্দটা প্রকাশ সেভাবে করা সম্ভব হয় না। যেভাবে বাচ্চারা করে থাকে, যে সময়টাকে আমি খুব খুজেঁ ফিরি।
পুরো নাম দিয়েগো আরমানদো মারাদোনা ফ্রাঙ্কো, যে যেভাবে ডাকতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করুন। খেলার মাঠে অবস্থান বলতে গেলে মধ্যমাঠের খেলোয়াড়, তবে ধাচেঁ আক্রমণাত্নক।
অনেকে পরিসংখ্যান দিয়ে অনেক কিছু যাচাই করেন। সে চিন্তা করলে তো একাধিক আরব ইসরাঈল যুদ্ধে আরবের তো শুরু থেকেই জয় পাবার কথা! আপনি সংখ্যা, উপাত্ত দিয়ে বিশ্লেষণ করলে ধারণা পাবেন এর থেকে বেশি কিছু নয়। তেমনি গোল ও বিশ্বকাপ দিয়েই ব্যবচ্ছেদ করে, একেই সেরা মনে করা উচিত নয়। যদিও ইতিহাসে জয়ীকে নিয়েই স্তুতি প্রস্তুত হয়।
নাম না জানা কত খেলোয়াড় এসেছে, গিয়েছে। তার মধ্য থেকেই কয়েকটি তারা জ্বল জ্বল করে। মারাদোনার নাম তুললে একটি নক্ষত্র সর্বদাই পিছু আসে সেটা হল পেলে। মানুষ যে দল বা সংঘকে পচ্ছন্দ করবে; তারই গুনগান গাইবে। এটাই স্বাভাবিক। আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে সঠিক পর্যালোচনা করাই উদ্দেশ্য।
প্রথমেই মারাদোনার কৈশর এর একটি ভিডিও, যারা ভক্ত তাদের জন্য
https://www.youtube.com/watch?v=xr7SfOC6X_U
মারাদোনা শারীরিকভাবে খুব শক্তিশালী ছিল যে কোন ফাউল উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে পারত। ফাউল হলেও বড় কোন ইনজুরিতে বারবার পড়তে হয় নি। আর ড্রিবলিং ছিল অসাধারণ। বলকে নিয়ে কিভাবে খেলা যায় আর তা দিয়ে প্রতিপক্ষকে কিভাবে নাঁচাতাে হয় তা সে ভালভাবেই রপ্ত করেছিল। আর আরেকটা কথা হল ক্ষিপ্রতা। এগুলো মিশিয়ে গতিময় ফুটবল যদি একজনই বল ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকলে তাকে আপনি কি বলবেন? যার কোন বারতি আক্রমণভাগের খেলোয়াড়কে দিতে হচ্ছে বলকে গোল দিতে। যদিও ১১*২ সদস্যের খেলা ফুটবল তবুও এই প্রতিভাকে শ্রেষ্ঠ রূপ দিতে সমস্যা কই?
আমার হাসি পায় সবচেয়ে বেশি একজন মধ্যমাঠের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় এর সাথে শুধু আক্রমণভাগের খেলোয়াড় এর সাথে পরিসংখ্যান মিলিয়ে একটি ফলাফলে আসা। পেলের একা দল টানতে হয় নাই, আর তার মাঠে অবস্থাটাও সেরকম ছিল না কখনো। যেখানে মারাদোনা করে গিয়েছে। Mid মারাদোনা Attacking striker(Forward) এ পেলে যদি একটি দলে খেলতেন তাহলে আমার বিশ্বাস তারা প্রতিপক্ষকে কাপিঁয়ে ফেলতেন। মারাদোনাকে অনেকে playmaker উপাধি দেন, আমি বলব সে রিখুয়েলমে বা জিদান থেকে অনেক বেশি বলব। মেসিকেও অনেকে একজন playmaker বলে কিন্তু আমি মনে করি তার মাঠের অবস্থান এর সাথে এটি যায় না।
মারাদোনা অন্ধকার জীবনের একটি হল কোকেইন তবে অনেকে এটিকে শক্তি বৃদ্ধিকারী মাদক মনে করলেও করতে পারেন; যা ভুল। কোকেইল কোন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিকারী ঔষধ বা মাদক নয়। এটি শুধুই একটি মাদক যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এতে স্বল্প সময়ের জন্য মানুষ মাদকের নেশায় থাকে এর থেকে বেশী কিছু নয়।
আর শেষটুকু বলা যায় হাত দিয়ে গোল দেওয়া, এই একটি বিষয় যা ব্রাজিল ভক্তদের খুব প্রিয়। একটি মানুষের ১০০ গুন থাকলেও ১ দোষই যথেষ্ট চেপে ধরার।
একজন সফল খেলোয়াড় একজন সফল কোচ হবেন বা ব্যক্তি জীবনের অনুপ্রেরণা হবেন তার নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং মারাদোনার খেলার শৈলী অপ্রতিরুদ্ধ।
কাকাকে একটু সাইড দিন
হ্যাঁ এরকম ভাবেই বলতো সুকুমার কাকা। মানে আমাদের খাঁচা গাড়ির চালক আর কি। খাঁচা গাড়ি শুনে ঘাবড়ে যাবেন না। মানে ইশকুল যাওয়া কচিকাঁচাগুলোকে যে টিনের গাড়ি করে আসা যাওয়া করানো হত, দুর থেকে দেখলে মনে হত এক বাক্স মুরগির ছানাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে খাঁচায় করে, এই সেই গাড়ি। খাঁচা গাড়ি। টিনের একটা গাড়ি, দুটো কাঠের তক্তা আড়াআড়ি। আর অনর্গল আমাদের দুষ্টুমি, চিৎকার, কাকার সাথে বিচিত্র বিষয়ে কথোপকথন এবং অতি অবশ্যই নানাপ্রকার খেলা। কাকা চালাত নিজের মেজাজে, আমাদের নানা গল্প শোনাত, এবং রাস্তায় ভিড় ভারের মধ্যে সেই হাঁক-‘ কাকাকে একটু সাইড দিন’। আমরা কখনো কুইজ খেলে, কখনো ট্র্যাম্প কার্ড খেলে ( আমাদের সময়ে এই খেলাটির সদ্য আগমন হয়েছে) সময়টা দিব্যি কাটিয়ে দিতাম। মাঝে মাঝে কাকাকে সাহায্য করতে পেছনের টিনের দরজা খুলে নেমে ঠেলতাম। কাকার কাছে আমরা সকলেই বুড়ো। মানে এই ছিল আমাদের ডাকনাম। একটু বেগ পেলেই গাড়ি কাকা বলতো বুড়ো এবার উঠে পড়ো। গাড়ির মধ্যে কাকাকে নকল করে আমরাও মাঝে মাঝে একসাথে বলে উঠতাম-‘কাকাকে একটু সাইড দিন’।
তখন আমার ছিল উদ্ভট মাথা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমার বিচিত্র খেয়াল মাথায় চাপত। সবথেকে বেশি আগ্রহ ছিল রেল লাইনের পাথরের প্রতি। সেগুলোকে বাড়ি নিয়ে এসে এক প্লাস্টিকের ম্যাগ্নিফাইং গ্লাস দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কিসব পরীক্ষা করতাম ভগবান জানে। ছোট থেকেই আমার অলৌকিক সবকিছুর প্রতি এক অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল, মনে হত কিছু একটা সবকিছুর আড়ালে হচ্ছে, সবাই ঠিক ধরতে পারছে না, আমি ঠিক আবিষ্কার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবো। বড় হয়েও সে অভ্যাস যে খুব বেশি গেছে এমনটা হলফ করে বলতে পারি না। যাক গে, যেটা বলছিলাম, একবার লাইন পার থেকে প্রচুর পাথর কুড়িয়ে কাকার গাড়িতে উঠেছি। কাকা ব্যাপারটা খেয়াল করেও একটা কথা আমাকে বলেনি, যদিও কাকা জানত আমি বাড়িতে কেবল একটাই পাথর নিয়ে যেতে পারবো, অতগুল নয়।সেগুলো গাড়ি থেকে কাকাকেই নামাতে হত। সেই প্রশ্রয়ে আমি কাকার ভেতরের পিতৃ সত্তাটাকে চিনে গিয়েছিলাম। এই সুকুমার কাকার বড় মনের পরিচয় আমি শুধু সেদিন পাইনি। একদিন বাড়ি ফেরার সময় বড় রাস্তার মোড়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের খাঁচা গাড়ির ঠিক পাশেই। বাইক থেকে পড়ে গুরুতর চোট লাগে এক মহিলার। সবাই এগিয়ে এসে কি হয়েছে, কি হয়েছে বললেও কেউ কাজের কাজটা আর করে না। ‘কাকাকে একটু সাইড দিন’- ভিড়ের মধ্যে থেকে একটা মানুষ এসে বাইক সামলে, সেই মহিলাকে খাঁচা গাড়ি করেই নিয়ে যায় সামনের হাসপাতালে, সঙ্গে তার স্বামীও ছিল, আমরাও ছিলাম। সেইদিন রাস্তায় ‘কাকাকে একটু সাইড দিন’- যেন অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের মতো বাজছিল। ডাক্তার ডেকে পুরো ব্যবস্থা করে তারপর কাকা আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল। কোনও কর্তব্যেই গাফিলতি করেনি।
সুকুমার কাকার সঙ্গে শেষ যে বার দেখা হল বুঝলাম সুকুমার কাকার খাঁচা গাড়ি একটাও আর নেই। খাঁচা গাড়ির চল উঠে গেছে আমাদের এখানে। সুকুমার কাকা এখন ভ্যান চালায়। ব্যাটারি ভ্যান। রোজ আমি যখন রাত করে বাড়ি ফিরি দেখি বড় রাস্তার মোড়ে সুকুমার কাকা ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদিন উঠেছিলাম, তারপর থেকে মুখ লুকিয়ে কোনক্রমে অতিক্রম করে চলে আসি কারণ কাকা কিছুতেই পয়সা নেয় না। কিছুতেই না। প্রথম দিনই শুনেছিলাম কথাটা যে কাকার নাকি গভীর অসুখ। কোমরে কি একটা হয়েছে কাকা নাম বলতে পারলো না, গাড়ি চালানো বারণ। কিন্তু আমি বুঝলাম কাকার একটা গাড়িও আর নেই। মেয়ের বিয়ে অনেক আগে হয়ে গিয়েছিল, কথাবার্তায় বুঝলাম ছেলে নিতান্তই অমানুষ হয়েছে। যেটা বুঝলাম না যে কাকার সেই বিখ্যাত- ‘কাকাকে একটু সাইড দিন’ কথাটা বদলে ‘কাকাকে একটু জায়গা দিন’ কেন হয়ে গেছে? এই সংসারের কাছে সারাজীবন খেটে কাকা কি একটুখানি জায়গাই চেয়েছিল, পায়নি, তাই কাকার এই নিদারুণ আকুতি? সে আর সাইড চেয়ে অতিক্রম করতে চায় না, সে এবার বসতে চায়? জায়গা চায়? তাই এ বদল। কাকাকে দেখে ‘ভালো মানুষের সঙ্গে সবসময় ভালো হয়’ –এই উক্তিটাকে লাথি মারতে ইচ্ছে করে। এখনো বড় রাস্তার মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা কাকার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়- কাকা তোমার আর সাইড লাগবে না, সবাইকে ছাড়িয়ে তুমি সবার আগেই রয়ে গেলে, তোমার জায়গায়। আমরা পুঁথি-পত্র পড়ে, প্রতিদিন একে অপরকে লেঙ্গি মারার ছক কষে বরং এখন সাইড চেয়ে মরি।তারপর বাড়ি এসে অভ্যাস করি আয়নার সামনে রোজ এক বুলি…
‘আমাকে একটু সাইড দিন।’
কাকা আমাকে একটু তোমার বড় মনটা দেবে?
চুরি করা পোষ্টঃ https://bibornoaakash.blogspot.com/2018/06/blog-post_3.html
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।