@Traveller
রূপবৈচিত্র-হ্রদের জল-পাহাড় আর অরণ্যের অপার সৌন্দর্যের কোল ঘেঁষে রয়েছে প্রকৃতির রূপসী কন্যা রাঙামাটি। চট্টগ্রাম বিভাগের পার্তব্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলার মধ্যে অন্যতম এই রাঙামাটি জেলা। আকা-বাকা পথ আর উঁচু-নিচু পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাঙামাটি। রাঙামাটিতে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে কাপ্তাই লেক, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, দেশের দীর্ঘতম ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান উল্লেখযোগ্য।
অপরূপ দৃশ্যে মন রাঙ্গাতে এবারের ঈদে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি থেকে। আপনার ঈদ হয়ে উঠবে আনন্দময়ী। একবার ঘুরে আসলেই যাত্রাপথ, কাপ্তাই, রাঙামাটি, রাজবন বিহার, জাফলং ঝরনা, কালিট্যাং-এর ছবি আঁকা হয়ে যাবে আপনার মানসপটে। বার বার স্মৃতি হয়ে খেলা করবে হৃদয় মাঝে।
কিভাবে যাবেন:
রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বেশ কয়েকটি গাড়ি প্রতিদিন রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। চট্টগ্রামের বিআরটিসি, অক্সিজেন মোড় ও বিভিন্ন বাসস্টেশন থেকেও রাঙামাটির গাড়ি পাওয়া যায়। এছাড়া প্রাইভেট গাড়ি নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি। সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন অভিজ্ঞ চালক।
হোটেল ও গেস্ট হাউজ:
রাঙামাটিতে রাত যাপনের জন্য সরকারি-বেসরকারি অনেকগুলো হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে; রয়েছে বোডিংও। বোডিংয়ের খরচ কম হলেও খুব ভালো ব্যবস্থা নেই।
কয়েকটি হোটেলের বর্ণনা:
(১) পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স: ১২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষসহ বেশ কয়েকটি সিঙ্গেল ও ডাবল রুম রয়েছে এই হোটেলে।
(২) হোটেল সুফিয়া: এতে রয়েছে ২৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম। এছাড়া ছোট-বড় সাধারণ কক্ষ রয়েছে আরও ৩৫টি।
(৩) হোটেল নিডস হিল ভিউ: ১৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও ১০টি সাদারণ রুম রয়েছে এতে।
(৩) হোটেল গ্রীন ক্যাসেল: এই হোটেলে রয়েছে ৭টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুম। এছাড়া সিঙ্গেল ও ডাবল রুমতো রয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে হোটেল জজ, হোটেল আল মোবা, হোটেল মাউন্টেন ভিউ, হোটেল ডিগনিটি, হোটেল সাফিয়া, হোটেল ড্রিমল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি মধ্যম মানের হোটেল।
এর সবকটি হোটেল-ই রাঙামাটি জেলা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। তাই এখানে অবস্থান করেই খুব সহজেই ঘুরে বেড়াতে পারেন জেলার সবকটি দর্শনীয় স্থানে।
পাহাড়ি সবুজ বন, মেঘমালা, পাহাড়ি ঝরনা আর সাংগু নদীর একমুখী ছুটে চলার দৃশ্য আপনাকে হাতছানি দেবে বান্দরবানের পথে পথে। বান্দরবান থেকে থানচির পথে যেতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পর শৈলপ্রপাত। পাহাড়ি ঝরনা। যদিও এটি এখন শুকিয়ে গেছে। এর কিছু দূর যাওয়ার পর মিলবে চিমবুক পাহাড়। বান্দরবান থেকে চিমবুকের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে আপনি বঙ্গোপসাগর, চট্টগ্রাম বন্দর দেখতে পাবেন। মেঘের আনাগোনার দিনে হাত বাড়ালেই শীতল ছোঁয়া পাবেন।
আকাশ আর মেঘ যেখানে ভ্রমন পিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। মেঘের সাথে পাহাড়ের যেখানে আজন্ম বন্ধুত্ব। বলছি নীলগিরি পর্যটনের কথা। এখানে পাহাড় ও মেঘের সাথেই বসবাস করে পাহাড়ি আদিবাসী ম্রো সম্প্রদায়ের অধিবাসীরা। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২ হাজার ২ শত ফুট উচ্চতায় এই নীলগিরি পাহাড়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। চিমবুকের পর চলতে চলতে একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াতে হয়। একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা_ 'বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক'। এবার সামান্য পথ যেতেই নীলগিরি। পর্যটন স্পট। বান্দরবান থেকে দূরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৬০০ ফুট উঁচু এ পাহাড়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সাতটি বিশ্রামাগার। মেঘদূত, আকাশনীলাসহ নানা বাহারি নামের এসব বিশ্রামাগারে রাত কাটানোর জন্য ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে।
তবে এমনিতে ৫০ টাকার টিকিট কেটে নীলগিরির চূড়া থেকে পাহাড়ের চারদিকের সবুজ দৃশ্য অবলোকন করা যায়। নীলগিরিতে করা হয়েছে একটি হেলিপ্যাডও। এখানকার বিশ্রামাগার ভাড়া নিতে হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আগে যোগাযোগ করতে হয়। নীলগিরি থেকে যত দক্ষিণে যাবেন, ততই আস্তে আস্তে সর্বোচ্চ সড়ক থেকে নিচের দিকে নামতে থাকবেন। কখনো দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে, কখনো বা পাহাড়ের পাশের সরু সড়ক ধরে চলে যাবে চাঁদের গাড়ি কিংবা নিজস্ব জিপ। পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি থেকে মাঝেমধ্যে উঁকি দেবে কোনো নারীমুখ কিংবা ছোট্ট শিশু। জুম চাষও দেখতে পাবেন। বর্ষার এই সময়টাতে আদিবাসী নারী-পুরুষ ব্যস্ত থাকে জুমের মাঠে।
এ ছাড়া ঘুরে আসা যায় আদিবাসীদের বিভিন্ন ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের বাগানে। পাহাড়ি ঝরনা থেকে আদিবাসী নারীদের পানি সংগ্রহ করার দৃশ্য দেখতে ভুলবেন না যেন। এ ছাড়া দুই পাহাড়ের মাঝখানে উন্মত্ত বর্ষায় ছুটে চলা সাংগু নদীও টানবে আপনাকে। আদিবাসীপাড়ার কার্বারি কিংবা কারো সহযোগিতায় ডিঙি কিংবা নৌকায় চড়ে আপনিও চলে যেতে পারেন আশপাশের কোনো মারমা পাড়ায়। আদিবাসীদের জীবনযাত্রা আপনার প্রাণ ছুঁয়ে যাবে। ঈদের ছুটিটা উপভোগ্য না হয়ে পারেই না!
যেভাবে যাবেন
ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে বান্দরবান। সেখানে রাতযাপনের জন্য বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। এরপর কোনো এক সকালে বান্দরবান থেকে চাঁদের গাড়িযোগে আরো গহিন অরণ্যে যাত্রা করা যায়। এ জন্য ভাড়া পাওয়া যায় চাঁদের গাড়ি। বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত একটি গাড়ি আসা-যাওয়ায় ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়। নিজস্ব গাড়ি নিয়েও যাওয়া যায়। তবে পাহাড়ি পথ, বিশেষ করে বান্দরবানের অাঁকাবাঁকা দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা সম্পর্কে চালক অভিজ্ঞ হলে ভালো। শহর থেকে চাঁদের গাড়ীগুলো নীলগিরি পর্যন্ত ৩/৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। এসব চাঁদের গাড়ীগুলো একসাথে ২০/২৫ জন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহণ করে।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে এসেই আপনাকে কোন আবাসিক হোটেলে রুম নিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। শহরের মধ্যে বিভিন্ন বাজেটের মধ্যে এসি/ ননএসি হোটেল পাওয়া যায়। পর্যাপ্ত হোটেল থাকায় রুম পেতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। তবে পর্যটনের ভরা মৌসুমে আগেভাগে বুকিং দিয়ে আসা ভালো। এখন বেশির ভাগ আবাসিক হোটেলের সাথেই খাবারের রেস্তোরা রয়েছে। শহরের রুমা বাসষ্টেশন থেকে বিভিন্ন চাঁদের গাড়ী, জীপ ইত্যাদি নীলগিরী পর্যটন কেন্দ্রে চলাচল করে। আপনাকে এসব গাড়ী রিজার্ভ করেই যেতে হবে গন্তব্যে। কারণ রিজার্ভ গাড়ীতে না গেলে আপনাকে পথে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। যা আপনার ভ্রমনের আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে। গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গাড়ী ২-৩ ঘন্টা সময় নিতে পারে। নীলগিরি পৌঁছে আপনি সেখানে রাত যাপনও করতে পারবেন। এখানকার কটেজগুলো একটু ব্যয়বহুল। এখানকার প্রতিটি কটেজের ভাড়া রাতপ্রতি ৪/৫ হজার টাকার মধ্যে। আর থাকতে না চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনাকে আবার বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে।
দিনাজপুরের পূর্বনাম ছিল ঘোড়াঘাট। জানা যায় জনৈক দিনাজ বা দিনাজরাজ নামক ব্যক্তি দিনাজপুরে রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে জেলার নামকরণ হয়েছে দিনাজপুর। প্রধান নদনদীর মধ্যে রয়েছে -যমুনা, আত্রাই, পুনর্ভবা, ঢেপা, কাঞ্চন, খরখরিয়া ইত্যাদি। খনিজ সম্পদের জন্য সমৃদ্ধ দিনাজপুর। দিনাজপুরের যে দুটি কীর্তির জন্য রাজা রামনাথ অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তার একটি কান্তজীর মন্দির অন্যটি রামসাগর। কথিত আছে, রাজা রামনাথের আমলে বৃষ্টিপাতের অভাবে একবার ক্ষেতের সব শষ্য নষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ ও ধূসর। অনাবৃষ্টির অভিশাপে জর্জরিত হয় সাধারণ প্রজা। প্রজাদের দুঃখদৈন্য মেটাতে মহাপ্রাণ রাজা খনন করান দীঘিটি। তারপর থেকে বহুকাল পর্যন্ত এটি রয়ে গেছে। রামসাগারকে ঘিরে যে সৌন্দর্যের পশরা বসেছে তা বর্ণনাতীত।
আছে কান্তজীর মন্দির, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মন্দির । শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অসাধারণ এক নিদর্শন এই মন্দির। দিনাজপুরের টেপা নদীর ওপারে কান্তনগর গ্রামে এর অবস্থান। দিনাজপুরে প্রবেশেই চোখে পরে সড়কের দুদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য লিচু গাছ। দিনাজপুর অঞ্চল তো লিচুর এক দেশই বটে। এখানে এসে লিচু খাওয়ার মজাই আলাদা।
লিচুর রাজ্য দিনাজপুরের মাশিমপুর লিচুবাগান
মধুমাসে ভ্রমন করতে যাওয়ায় সকলের লিচু খাওয়া। দিনাজপুর জেলার সবখানেই কম-বেশি লিচুর চাষ হয়। তবে মাশিমপুর লিচুর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। এখানকার বাড়িতে বাড়িতে দেখা গেল সবাই লিচু নিয়ে ব্যস্ত। সড়কের দুপাশে শুধুই লিচুগাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ডাল ভারী হয়ে ঝুলছে লাল লাল লিচু।বাজার থেকে কিনে লিচু খাওয়া আর বাগানের গাছ থেকে নিজ হাতে পেড়ে লিচু খাওয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে।প্রধান সড়ক ছেড়ে ছোট একটি রাস্তায় ঢুকতেই পাওয়া যায় আরো শত শত লিচুবাগান।
মাশিমপুরের লিচু বেশিরভাগই বাড়ি কেন্দ্রীক। ঘরের আঙিনা, আশপাশেই বেশিরভাগ লিচু গাছ। বাগানও আছে প্রচুর। ভ্রমণে গেলে এখানে তাই কমবেশি আতিথেয়তাও পাওয়া যায়। এই এলাকার যে কোনো বাড়ি কিংবা বাগানে ঢুকে পড়তে পারেন আপনিও দিনাজপুর ভ্রমনে গিয়ে। মাশিমপুরের বাগানে প্রতি শত লিচু জাতভেদে দাম ২শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। দেশি ও মাদ্রাজি লিচুর দাম সবচেয়ে কম। আকারে বেশ বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় বোম্বাই ও চায়না-থ্রি লিচুর দাম সবচেয়ে বেশি। বোম্বাই আর মাদ্রাজি লিচুর দাম কিছুটা কম, প্রতি ১০০ লিচু ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বেদানা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আর চায়না-থ্রি জাতের লিচু ৮০০ টাকা থেকে শুরু। এছাড়া রয়েছে কালিতলা নিউমার্কেট, যেখানে লিচুর হাট বসে, সেখানে লিচু কিনে পার্সেল করে দিতে পারেন আপনার গন্তব্যে। দিনাজপুর থেকে লিচু আনার এটাই সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, তবে পরিমাণে অল্প হলে হাতে করেই নিয়ে আসা যায়।
লিচুর রাজ্যে ঘুরে দেখে লিচুর স্বাদ নিয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। তাই এখনই বেড়ানোর পরিকল্পনা করে ফেলতে পারেন যে কেউ।
কিভাবে যাবেন,কেমন খরচ?
ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেন দুই পথেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী (Dinajpur) বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯০০ টাকা।
এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ,এস আর ট্রাভেলস,কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনের নন-এসি বাসও চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা। ঢাকা থেকে আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড় অথবা গাবতলী হতে নাবিল, বা বাবলু এন্টারপ্রাইজের চেয়ার কোচে করে সরাসরি দিনাজপুর । প্রায় সারাদিন ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরপর গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। তা ছাড়া উত্তরা হতেও কিছু পরিবহন দিনাজপুর যায়।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। দিনাজপুর (Dinajpur) থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। দিনাজপুর (Dinajpur) থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।
কোথায় থাকবেন, কেমন খরচ?
দিনাজপুর শহরের কোন হোটেলে থাকতে পারেন। দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশন এর মোটেলসহ অনেকগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হোটেল রয়েছে। আপনি চাইতে এখানে থাকতে পারেন। হোটেল ডায়মন্ড, পূর্নভবা, হোটেল আল রশিদ উল্লেখযোগ্য।দিনাজপুর (Dinajpur) শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এ ছাড়া ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দিতে পারেন। দিনাজপুরের (Dinajpur) পর্যটন মোটেলে এসি টুইনবেড ১৫০০ টাকা এবং এসি টুইনবেড ডিলাক্স কক্ষ ১৮০০ টাকা। এ ছাড়া দিনাজপুরের (Dinajpur) অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ১০০-১২০০ টাকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে। কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হলো—মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড (০৫৩১-৬৪৬২৯),নিমতলায় হোটেল আল রশিদ (০৫৩১-৬৪২৫১), হোটেল নবীন (০৫৩১-৬৪১৭৮), হোটেল রেহানা (০৫৩১-৬৪৪১৪), নিউ হোটেল (০৫৩১-৬৮১২২)।
দিনাজপুরের বিশেষ খাবার গুলোঃ
দিনাজপুর (Dinajpur) এর বিখ্যাত এবং খুব জনপ্রিয় খাবার লিচু,চিড়া,পাপড় খেতে ভুলবেন না।
বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম দিনাজপুরের লিচু রাজ্য সম্পর্কে। এবার তাহলে ভ্রমনের সরঞ্জামাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন সৈকত বলা যায়। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এ জায়গা থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাচ্চের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেটা সৈকতের দুই প্রান্ত থেকে। ভালোভাবে সূর্যোদয় দেখা যায় সৈকতের গঙ্গামতির বাঁক থেকে আর সূর্যাচ্চ দেখা যায় পশ্চিম সৈকত থেকে। এ সৈকতের দৈর্র্ঘ্য প্রায় আঠারো কিলোমিটার আর প্রস্থে প্রায় তিন কিলোমিটার। পুরো সৈকত ঘেঁষেই রয়েছে বিচ্চীর্ণ নারিকেল বাগান। সমুদ্র সৈকতের পূর্ব প্রান্তে রয়েছে গঙ্গামতির খাল। এর পরেই গঙ্গামতির সংরক্ষিত বণাঞ্চল। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের একেবারে পশ্চিম পাশে আছে জেলে পল্লী। মাছের শুটকি তৈরির বিশাল একটি এলাকাও আছে এখানে। এছাড়া পুরো সৈকতজুড়েই সারা বছর দেখা মিলবে মাছ শিকারীদের বিভিন্ন কৌশলে মাছ ধরার দৃশ্য। কুয়াকাটার পুরো সৈকতে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মটর সাইকেলের ব্যবস্থা। একটি সাইকেলে দুইজন ভ্রমণ করা যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলে সাগরকন্যাক্ষ্যাত মনোরম একটি ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত লতাচাপালী ইউনিয়নে অসাধারণ এ সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান। কুয়াকাটার ঠিক পূর্বেই রয়েছে গঙ্গামতির বা গজমোতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পশ্চিমে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল উত্তরে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের বাণিজ্য কেন্দ্র আলীপুর। সাগরের বুকে এখান থেকেই সূর্যোদয় এবং সূর্যাচ্চের মনোরম দৃশ্য দেখা যায় বলে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বিবেচনায় দেশের অন্যান্য সমুদ্র সৈকত থেকে এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
কুয়াকাটার নামকরণ নিয়ে রয়েছে মজার ইতিহাস। ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন আরাকান ছেড়ে নৌকাযোগে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। চলতে চলতে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরের রাঙ্গবালি দ্বীপ খুঁজে পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করে। সাগরের লোনা পানি ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তারা এখানে একটি কূপ খনন করে এবং এ স্থানের নাম দেয় কুয়াকাটা। কুয়াকাটা ভ্রমণের আদ্যোপান্ত নিয়ে চলুন জেনে নেই।
কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নমকরণের উৎস প্রাচীন সেই কুয়াটি এখনো আছে। তবে অদূরদর্শী কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য এবং প্রাচীন আদল নস্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রাখাইন আদিবাসীদের বাসস্থল কেরানিপাড়ার শুরুতেই বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে রয়েছে এই কুয়াটি।
সীমা বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে প্রাচীন একটি বৌদ্ধ মন্দির, নাম সীমা বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় সাঁইত্রিশ মন ওজনের অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি।
কেরানিপাড়া
সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী কেরানিপাড়া। এখানকার রাখাইন নারীদেও প্রধান কাজ কাপড় বুনন। এদের তৈরি শীতের চাদর বেশ আকর্ষণীয়।
আলীপুর বন্দর
কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি মাছ ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে। আলীপুর বন্দর ঘুরে দেখতে পারেন বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছের বিশাল আয়োজন।
মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আকেটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বৌদ্ধ মন্দির। এ মন্দিরেই রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। এখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।
গঙ্গামতির জঙ্গল
কুয়াকাটা সুমুদ্র সৈকত পূব দিকে শেষ হয়েছে গঙ্গামতির খালে গিয়ে। আর এখানে শুরু হয়েছে গঙ্গামতির বা গজমতির জঙ্গল। বিভিন্ন রককম গাছপালা ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা মিলতে পারে বন মোরগ, বানর ও নানা রকম পাখির।
ফাতরার বন
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে নদী পার হলেই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এরই নাম ফাতরার বন। এ জায়গাটি অবিকল সুন্দরবনের মতো হলেও হিংস্র কোন বন্যপ্রাণী নেই বললেই চলে। বন মোরগ, বানর আর বিভিন্ন রকম পাখিই এ বনে বেশি দেখা যায়। খুবই কম পরমিানে দেখা মিলে বন্য শুকরের। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে লাগবে ইঞ্জিন বোট। সারা দিনের জন্য মাঝারি মানের একটি বোটের ভাড়া ১৫০০- ২০০০টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী। সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রশুটে চলাচল করে এমভি দ্বীপরাজ, সৈকত ইত্যাদি লঞ্চ। এসব লঞ্চে প্রথম শ্রেনীর দ্বৈত কেবিনের ভাড়া ৮৫০-১০০০ টাকা। পুয়ায়াখালী বাস স্টেশন থেকে প্রতি ঘন্টায় কুয়াকাটার বাস ছাড়ে। ভাড়া ৬০-৭০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল এসে সেখান থেকেও বাসে চড়ে কুয়াকাটা আসা যায়। ঢাকা থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালীর লঞ্চগুলো ছাড়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায়। ঢাকা থেকে সরসরি বাসও চলে কুয়াকাটার পথে। কমলাপুর বিআরটিসি বাস স্টেশন থেকে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ছাড়ে সরকারী পরিবহন সংস্থার বাস। আর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কুয়াকাটার পথে চলে সাকুরা, সুরভী, দ্রুতি ইত্যাদি পরিবহনের বাস। ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
কুয়াকাটায় থাকার জন্য এখন বেশ কয়েকটি ভালো মানের হোটেল আছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন হলিডে হোমস। হোটেল স্কাই প্যালেস, হোটেল নীলঞ্জনা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল গোল্ডেন প্যালেস, হোটেল সাগর কন্যা।
প্রয়োজনীয় তথ্য
কুয়াকাটা ভ্রমণে যাওয়ার আগে একটি কথা জেনে যাওয়া ভালো। সুন্দর এ পর্যটন কেন্দ্রটি সরকারের কাছে বরাবরই উপেক্ষিত। তাই পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রায় আড়াই ঘন্টার এ পথটুকু পেরুতে কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হন পর্যটকরা। তবে সাগরকন্যার সৌন্দর্য দেখার পরে সে কষ্ট অনেকের কাছেই সামান্য মনে হবে। কুয়াকাটার পাশ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বাহন মোটর সাইকেল।
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।