@allinarzoo
মিটিং এ গৃহিত কিছু প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়......
১।আমরা সবাই একমত হয়েছি যে এবার গতবারের থেকেও ব্যাপক আকারে এই শীতবস্ত্র বিতরন কার্যক্রম চালাবো।
২। আমরা সবাই মিলে অনলাইনে এবং অফলাইনে এই প্রজেক্টের প্রমোশনের জন্য কাজ করবো। যত বেশী মানুষকে আমাদের এই কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে ততোই আমাদের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে।
৩। কন্ট্রিবিউশনের ব্যাপারে কোন বাধা ধরা লিমিট নেই। সবাই যার যার ইচ্ছে মত কন্ট্রিবিউশন করবে।
৪। আমরা এবার ফান্ড কালেকশনের জন্য দুটি বিকাশ এ্যাকাউন্ট আর দুটি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যাবহার করবো এবং সবার সুবিধার্থে একটা হটলাইন নম্বরও থাকবে যা আগামী ২/৩ দিনের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে।
৫। আমরা পুরো নভেম্বর জুড়ে ফান্ড কালেকশন করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আমাদের বিতরণ কার্যক্রম শেষ করবো। কোথায় বিতরণ করবো সেটা আরো পরে ঠিক করা হবে পারিপার্শ্বিক সব কিছু বিবেচনা করে।
আমাদের কাজের জন্য ২ টা বিকাশ,একটা ডিবিবিএল ও একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট চালু করা হয়।
আমরা ওই দিন থেকে আমাদের কাজ শুরু করলাম.........১৮ তারিখ পর্যন্ত আমাদের ফান্ডে জমা হয়েছে ৪০০০০ এর একটু বেশি।
পরবর্তীতে ১৮ তারিখে নর্থ এন্ড কফি সপে আবার আমরা মিটিং এর আয়োজন করি।উক্ত মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়,যে ভাবেই সম্ভব ফান্ড বাড়েতে হবে। শাহ্ আরাফাত হোসাইন ভাই আমাদের কিছু সুন্দর দিক নির্দেশনা দেয়।
২৭শে নভেম্বর রোজ শুক্রবার বিকেল ৪ ঘটিকায় আমরা সবাই খিলগাঁও ( আপন কফি শপ) এর সামনে মিলিত হব সর্ব মোট কত ফান্ডে জমা হল......আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমাদের ফান্ডে ১১৫০০০ জমা হবে যায়।
২৮ তারিখ কেনাকাটা ৩৫০ কম্বল কেনা হয়।এবং ৩ ডিসেম্বর তারিখে 336 পিস কান টুপি,206 পিস মাফলার কেনা হয়।
৫ তারিখে আমরা ৮ জনের একটা গ্রুপ কুড়িগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করি।
কুড়িগ্রামের যাত্রাপুর ইউনিয়ন, ব্রহ্মপুত্র নদের উপনদ দুধকুমার পার হয়ে ৩০ মিনিট পায়ে হেঁটে পৌছালাম চরের মধ্যে অবস্থিত একটি স্কুলের মাঠে |
ওখানকার স্বেচ্ছা সেবকদের সাহায্যে সুশৃংখল ভাবে হয়ে গেল আমাদের এবারের শীতবস্ত্র বিতরণ |
প্রাপ্ত বয়স্কদের দেয়া হলো ৩৫০ টি কম্বল,৩৩৬ কান টুপি আর ২০৬ মাফলার বিতরণ করি।
ফিরে এসে সেদিন রাতে আমরা সবাই অনেক ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েছি | ঘুম ভেঙ্গে মনে হলো, ৩৫০ টা কম্বলের নিচে অনেক গুলো মানুষ ঘুমিয়েছে শান্তিতে , উষ্ণতায় ! যে যেখান থেকে, যে অবস্থায়, যতটুকু সম্পৃক্ত ছিলেন সবাইকে সেই উষ্ণতা ছুয়ে যাক!
সন ২০১৪, নভেম্বর মাসে বেশতোতে শীতবস্ত্র প্রদান নিয়ে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বেশতো পরিবারের সকলের সতুস্ফুর্ত অংশগ্রহন এবং বেশতোর বাহিরের অনেকের সহযোগিতায় আমরা সবাই মিলে ছোট পরিসরে হলেও কিছু মানুষের পাশে থাকতে পেরেছি। ঢাকার বাহিরে রাজশাহীর গোদাগারী গ্রামে ( সবধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট পাবার কারণে) এবং ঢাকাতে শক্তি বিদ্যালয়ের পাঁচটি শাখায় আমরা কিছু মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
বিকাশ ও ব্যাংক এ্যাকাউন্ট মিলিয়ে আমাদের সর্বমোট সংগ্রহ দাড়িয়েছিল ৯০ হাজার টাকা।
আমাদের কার্যক্রমের প্রথম অংশে আমরা ৫ই ডিসেম্বর রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিমিঃ দূরে গোদাগাড়ী থানার জগপুর নামের একটি গ্রামে। ১২০ পিস কম্বল, ১২০ পিস কানটুপি আর ১২০ পিস মাফলার বিতরন করি। আমাদের এই ত্রান ওই গ্রামের প্রায় ২৫০ পরিবারের মধ্যে বিতরন করা হয় যার মধ্যে বেশ কিছু সাওতাল পরিবারও ছিল।
পরবর্তিতে ১৩ই ডিসেম্বর ঢাকার “শক্তি বিদ্যালয়” এর ৫টি (কড়াইল বস্তি, মিরপুর-১, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও দয়াগঞ্জ) শাখার ২৩৫ জন ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আরো ১৫০টি সোয়েটার ২৪০টি কানটুপি ও ১২০ জোড়া মোজা বিতরন করা হয়। উল্লেখ্য এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বয়স ৬ থেকে ১১ বছরের মধ্যে এবং সবাই বস্তিবাসি ও ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান।
কম্বলগুলো আমরা অর্ডার দিয়ে বানানো হয়েছিল, আর বাকিগুলো মার্কেট থেকে কেনা হয়েছিল।
রাজশাহীতে যেখানে আমরা বিতরণ করেছি, সেখানে পুর্নাজ্ঞ সহযোগিতা করেছেন আতিক ভাই, উনার পুরোপরিবার, সাদিয়া আপু। সাথে ছিলেন আতিক ভাইয়ের বন্ধু, রিঙ্কু। আতিক ভাইয়ের সাথে এখনও কথা হয় আমার, উনি এখনো আমাদের সবাইকে ধন্যবাদ দেন আমাদের এই পাশে থাকার জন্য, ধন্যবাদ দেয় গ্রামের সেই সাধারণ মানুষগুলো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে যে কম্বল দিয়েছেন আমরা ৫-৬ বছর এমনিতেই ব্যবহার করতে পারব। আমাদের ইচ্ছেটাই ছিল কম মানুষকে দিলেও আমরা ভালো কিছু দেবার চেষ্টা করব যেন উনারা অনেক বছর সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।
ঢাকাতে শক্তি বিদ্যালয়ের যে বাচ্চাগুলোর পাশে আমরা থাকার চেষ্টা করেছি, আমাদের প্রধান ইচ্ছেটাই ছিল তাদের শিক্ষার প্রতি আরো আগ্রহ তৈরী করার ও নিয়মিত স্কুলে যাবার প্রতি আগ্রহ তৈরী করার।
প্রথমবারের সকলের সহযোগিতায় সফলভাবে শীতবস্ত্র কার্যক্রম সম্পন্ন হবার কারণে বেশতো পরিবারের সবাই আমরা উদ্যোগ নেই আম বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার, ২০১৫ সালে আমরা শক্তি বিদ্যালয়ের বাচ্চাদেরকে সফলভাবে আম বিতরণ করতে সক্ষম হই।
সেই আত্মবিশ্বাসেই এবারেও শীতবস্ত্র কার্যক্রম শুরু করা আমাদের সবার। এবারের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০১৪ সালের শীতবস্ত্র কার্যক্রমের বেঁচে যাওয়া ৩৫ টাকা ও আম বিতরণ কার্যক্রমের ২৫০০ টাকা দিয়ে। গতবারের মত না হলেও যারা সত্যিকার ভাবে মন থেকে অর্থ, পোশাক, প্রদানের মাধ্যমে নয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে অনলাইন ও অফলাইনে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, এই কার্যক্রম কে সফল করতে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমি আমার অবস্থান থেকে (একজন মানুষ হিসেবে)।
গতদুবারের কার্যক্রমের একজন সাধারণ ভলেন্টিয়ার হিসেবে থেকে আমি দেখেছি কার্যক্রমগুলোর সবকিছুই ওপেন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে সবক্ষেত্রে, কোনো লুকোচুরির বিষয় ছিলনা। যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রত্যেকের পাশাপাশি যারা সরাসরি কার্যক্রমে কাজ করেছেন তাদের প্রত্যেকের নিয়ত সৎ ছিল বলেই কার্যক্রমগুলো সফল হয়েছে এবং এটুকু বলতে পারি আল্লাহ সহায় থাকলে ইনশা আল্লাহ এবারও সফল হবে।
আরেকটি বিষয় শেয়ার না করলেই নয়, কোনো পরিবার কে গড়ে তোলা, ( অন্তত সেই পরিবারের একজন বা দুজন, যিনি আগামীতে সেই পরিবারকে গড়ে তুলবেন) কাওকে পুর্নাজ্ঞভাবে শিক্ষিত করে তোলার দায়িত্ব নেয়া, কোনো ভালো কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য সহযোগিতার পাশাপাশি অর্থ ও সরাসরি কাজ করে যাওয়ার বিষয়টিও খুব জরুরি। প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য নিয়মিত ফান্ডের সংগ্রহ করারও অনেক প্রয়োজনীয়তা আছে। ইনশা আল্লাহ ধীরে ধীরে এগুলোও সম্ভব হয়ে উঠবে যদি সবাই মন থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ও পাশে থাকেন। সম্মিলিত চেষ্টার ফল হিসেবে দেশে ও বাহিরে অনেক নিদর্শন রয়েছে, তাদের মত করে আমরাও পারব সবাই মিলে যদি মন থেকে একসাথে মিলেমিশে এই যাত্রাকে ধরে রাখতে পারি এবং সামনে এগিয়ে নিতে পারি।
ভালো থাকবেন সবাই, ভালো কাটুক সবসময়।
হঠাৎ শীতটা বেশ জাকিয়ে আসলো আর আমার পা পড়লো চট্টগ্রামে। শহরটা আমার বেশ পছন্দ, মাঝে মাঝেই অফিসের কাজে আসতে হয় এখানে । অবশ্য এবার আসার ইচ্ছে ছিলোনা একদমই। মানিব্যাগের স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো যাচ্ছে না আজকাল, তারপর আবার মাসের শেষ। বাস থেকে নেমে কিছুদূর যেতেই আবিষ্কার করলাম, খারাপ স্বাস্থ্য নিয়ে বহুদিন আমার সাথে থাকা মানিব্যাগটা নেই! সামান্য কিছু টাকা কাঁধের ব্যাগে ছিলো বলে রক্ষা কিন্তু তা দিয়ে কিভাবে চলবো সেটা ভেবে কিছুক্ষণ চুল ছিঁড়লাম। তারপর ভাবলাম সস্তা হোটেলে উঠবো, খাবো সস্তা খাবার। রাগ ও দুঃখে অনেক ক্ষণ মন খারাপ করে থেকে রাতের খাবার খেতে গেলাম। খাবার খেয়ে স্বভাবমত ভুঁড়ি উচু করে রাস্তায় হাঁটছি এমন সময় খেয়াল করলাম ফুটপাথের পাশে এক বৃদ্ধা পাতলা কাঁথা নিয়ে শোবার আয়োজন করছে। এত ঠাণ্ডার ভেতর বৃদ্ধা ছেড়া একটা কাথা নিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছে ব্যাপারটা খুব করুণ। ব্যাপারটা অসম্ভব করুণ হয়ে যায় যখন দেখি বৃদ্ধা শীতে কাঁপছেন । ব্যাপারটা ঠিক হজম করতে পারলাম না। খালি সেই বৃদ্ধার কথা মনে হতে লাগলো। রাতে কম্বল নিয়ে ঘুমাতে পারছিলাম না, মনে হচ্ছিলো ঐ বৃদ্ধার ফুটপাথে ছেড়া কাঁথা নিয়ে ঘুমাবার কথা। প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছিলো কোনো অপরাধ না করেই। পরদিন বিকেলে দিনের কাজ শেষে মনে হলো আমার এই কয়েকদিন কিভাবে যাবে সেটা জানিনা কিন্তু এই অপরাধবোধ থেকে আগে বাঁচতে হবে। যে অল্পকিছু টাকা ছিলো তার প্রায় পুরোটা দিয়েই একটা কম্বল কিনলাম সেই বৃদ্ধার জন্য। মনে হচ্ছিলো তার শীতের যন্ত্রনা একটু কমলে হয়তো আমার এই অপরাধবোধও কিছুটা কমবে।
রাতেরবেলা সেই ফুটপাথের পাশে অপেক্ষা করতে থাকলাম বৃদ্ধার জন্য। ভেবে বেশ ভালো লাগছিলো কম্বলটা পাওয়ার পর বৃদ্ধার অনুভূতি কেমন হবে। হঠাৎ খেয়াল করলাম বেশ কিছু সময় কেটে গেলেও বৃদ্ধা আসছেননা। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করেও বৃদ্ধার দেখা পেলামনা। পুরো রাস্তার ঘুরলাম, আসে পাশের রাস্তা গুলোতেও খুঁজলাম কিন্তু তাকে কোথাও পেলাম না। অনেকক্ষণ খোঁজার পর একসময় ব্যার্থ মনে হোটেল রুমে ফিরে গেলাম। খুব বেশি মন-খারাপ লাগছিলো।
পরের দিন রাতে আবার বের হলাম সেই বৃদ্ধার সন্ধানে, কিন্তু কোথাও পেলামনা তাকে। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করলাম, অনেক ক্ষণ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম কিন্তু কোঁথায় সে? আমি চট্টগ্রামে আরো পাঁচ দিন ছিলাম, প্রতি রাতেই কম্বল নিয়ে বৃদ্ধাকে খুঁজতে বের হতাম, যদি তাকে পাই।
কাউকে মন থেকে কিছু দিতে চেয়েও দিতে না পারার কষ্টটা খুব গভীর। সেই কষ্ট নিয়েই ঢাকা ফিরে আসলাম।
(শীতরাতের অপরাধবোধ নামে এই গল্পটা আগেও পোষ্ট করেছিলাম যা আমার জীবনের এক
সত্য ঘটনা । আজও প্রায়ই আমি সেই অপরাধবোধে ভুগি। আসলে আমাদের সবার ভেতরেই
এমন কিছু অপরাধবোধ বা ব্যাথা থাকে । সেই সাথে আমাদের ভেতর কিছু
দ্বায়িত্ববোধ থাকে । সেই দ্বায়িত্ববোধ থেকে আমরা দাড়াতে চাই শীতার্তদের
পাশে, আর সাথে চাই আপনাকে, তোমাকে ও তোকে ।
আমাদের আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য
--বিকাশ নম্বর: ০১৯১২৫৬২০৭২ (পার্সোনাল)
বিকাশ নম্বর: ০১৮২০৫৮২৬৩৬ (পার্সোনাল)
ডাচ বাংলা মোবাইল একাউন্ট নম্বর: ০১৬৭৪৫৬৫৮৯৮০
ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ডিটেইলসঃ
Name of the Account: MD. YASEEN KHAN
Account No: 105 - 101 - 70249
Dutch-Bangla Bank Ltd
Foreign Exchange Br.
Motijheel, Dhaka.
যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগঃ ০১৯১২৫৬২০৭২।
আশা করি আমাদের ছোট ছোট প্রচেষ্টা বড় কিছুতে রূপান্তরিত হবে।
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।