@sayfme
“সেবার অবশ্য বেশ খাওয়া দাওয়া হয়েছিল, যাকে বলে পেটপুরে । আর আজকে খেলাম । বলতে পার পেট ভরে আর কি” – লাকীর বাসাতে তার জামাইয়ের ড্রয়িংরুমে বসে দই মুখে দিতে দিতে শুরু করলাম। বিয়ের পর যে জামাইয়ের দাবী ড্রয়িংরুমতক বজায় থাকে জানা আছে আমার । “আর আমি বলি কি, ভাল রাধুনির হাতের ছোয়াতে কাকের মাংশও কবুতরের বাচ্চার মত লাগবে ।”
তুমি খাওয়া দাওয়া শুরু করেছ, তা যা বলা শুরু বল তুমি , মাঝপথে রকি ফোড়ন কাটল ।
“এই দেখ রকি, জানতাম আমি তুমি বিশ্বাস করতে চাইবে না ।” বাকি দইটুকু গিলে ফেললাম । “আরে বাপু ভাল রান্নার ঠেলাতে সেবার তো মানুষের মাংশ খেয়ে ফেলছিলাম প্রায় ।”
জ্যোতি হইহই করে উঠল, ভাইয়া তো ঠিক বলেছে, আপনি যে খাওয়া দাওয়া করতে চান না আমরা জানি ।
শোন মেয়ের কথা , বাপু আমি কম খাই ঠিক তা বলে ভোজনরসিক আছি । ভাল রান্না চেখে দেখতে স্বয়ং শয়তানও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি আর আমি তো কে ! শয়তান আর আদমের গন্ডগোলের মুলেও কিন্তু খাওয়া দাওয়া নিয়ে তা জান তোমরা?
রাসেল মানে লাকির জামাই টিভির থেকে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বেশ হেসে দিল খানিক । লাকি মৃদু হেসে বলল আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া গল্পটুকু শুনি আগে, পরে বাচ বিছার ।
ও হ্যা তা যা বলছিলাম। আমি গোড়া থেকে শুরু করলাম আবার, সেবার যাওয়া পড়েছিল বনের দিকে । রকি তো চিন আমার ফ্রেণ্ড রাজন, মাগুরা বাড়ি । ওর চাচা ফরেস্টার ছিলেন । ওনাকে বলে গেলাম সেবার বনে বাদাড়ে । ওখানকার ফরেস্ট অফিসার একসময় চাচাজির আন্ডারে চাকুরি করতেন নাম অরিজিত, বেশ ভাল খাতির যত্ন করে স্টেশন জিপ পাঠিয়ে আমাকে রিসিভ করে নিয়ে আসল । ওনার বাংলোতে কর্মী বলতে বাইরে দুজন গার্ড থাকে, আর ভেতরে এক গৃহকর্মি কাম ভৃত্য, সে বাপু মানুষ বটে একাতে একশজন । কেবল একটায় সমস্যা রাতে চোখে একটু কম দেখে, রাতকানা না, কম দেখে আর কি । তবে আমি যাওয়াতে পুন্নু মানে কেয়ারটেকার , বেশ খুশি । বন বাদাড়ে বাইরের মানুষ তেমন যায় না । আর তার অফিসার মানে সাহেব আর কি তখনও ব্যাচেলার । রান্না বান্না পুন্নু নিজেই করে । বেশ ভাল না চমৎকার রান্না করে পরেরবেলা খাবার মুখে দিয়ে বুঝে গেলাম । না না লাকি আর তোমার মা মিনু কাকিমার ধারেপাশেও না । তবে এক জায়গাতে মিল আছে তোমাদের সাথে, সে খাওয়াতে জানে বটে । মানে সাহেব আরেকটু দেই, আরেকটু দেই করে পুরো পাত ভরে এমন অবস্থা, মেহমান পুরো কাত ।
দম নিয়ে দইয়ের বাটি চামচ সামনের টিপয়ে নামিয়ে রাখলাম । লাকি ইশারা করল জ্যোতি কে আরো নিয়ে আসার জন্য । আমি মৃদু হাসলাম । এক দৌড়ে ও ফ্রিজ থেকে আরো খানিক দই কেটে নিয়ে আসল সে ।
আসলে খাওয়ানোর বহর দেখে মনে মনে ভয় পেয়েছিলাম । তবে যেটা ভাল লেগেছিল, রান্না করত হরেক পদের । আজিব আজিব ধরনের সব্জী, চচ্চড়ি, ভাজি । দুই বেলা মাছ তরিতরকারী দিয়ে খেলাম । পরেরদিন রাতে, মানে যেদিন পৌছেছিলাম তার পরের কথা বলতেছি । খেতে বসে অরিজিত আর আমি, পুন্নু ঢেকির মত ঢুকানো শুরু করেছে ততক্ষণে , বলেই ফেললাম আসলাম যখন শিকার টিকার করার উপায় নাই?
অরিজিত হেসেই ফেলল, না ভাই, আগের মত শিকার তো নাই, আর অনুমতিও পাওয়া যায় না ।
না না আমি বলে ঊঠলাম, বনমোরগ টোরগএগুলা…র কথা বলতেছি । আমি ভাই গাদা বন্দুক ভয় পাই ।
অরিজিত আশ্বস্ত করল কাল পুন্নু নিয়ে যাবে, আর ফরেস্ট অফিসারদের নিজস্ব এয়ারগান খানা দিবে সাথে । পুন্নু এ কথা শুনে দুখানা পাহাড়ি নদীর মাছের রুপালি পেটিভাজি তুলে দিল । বুঝে নিলাম তার খুশি প্রকাশের ভাষা এটা ।
সকাল সকাল পুন্নু কাধে এয়ারগান ঝুলিয়ে হাকডাক পেড়ে উঠিয়েই ছাড়ল । অরিজিত আমাদের বিদায় আদায় দিয়ে অফিসের দিকে ঢুকে গেল । আমরা বের হলাম শিকার অভিযানে । পুন্নু এমন সাজ সেজেছে পুরো মনে হচ্ছিল শোলে সিনেমার গাব্বার সিঙের চ্যালা । আমার এয়ারগানের দক্ষতার কথা তো বলি নাই । শুনলে হয়ত সাজগোজ চেঞ্জ হয়ে যাবে ভয়ে কিছু বলি নি । ভাবলাম সবারই বিনোদনের প্রয়োজন আছে আর কি । হেটে হেটে বনের ভেতরে ঢুকছি আমরা , তা আধ মাইল পর্যন্ত হেটেছি ততক্ষণে । বন বলে তেমন কিছু নাই এখানে, সিনেমাতে আর ডিসকভারিতে দেখা ভয়াবহ টাইপের কিচ্ছু নাই । শুকনো মাটির উপর দিয়ে হাটতে হাটতে কিঞ্চিত বিরক্ত আমি । পুন্নু বেশ সজীব ।
চুপচাপ না থেকে জিগ্যেস করলাম কি হে পুন্নু বনের মোরগ মুরগি সব কি তোমার চেহারা দেখে পালাল । পুন্নু গাল ভরে হাসল শুধু ।
না সাহেব আছে, সামনে চলেন ।
সামনে সামনে করতে করতে বোধহয় মেইল তিনেক ভেতরে এসেছি, ঝোপঝাড় টিলাটুলা দেখা যাচ্ছিল । মিনিট দশেক পর একটা আচমকা মোরগের ডাক শুনলাম । পুন্নু কাধ থেকে এয়ারগান নামিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিল । কিন্তু আমি চোখের সামনে কিছুই দেখি না । এয়ারগান নাম হলেও তো কাউকে মারতে বাতাসে ফায়ার করা যায় না ।
আধা বেলার পর অনেক কসরত করে সেবার একখানা বনমোরগ মেরেছিলাম । আমার গুলি পায়ে লেগেছিল মোরগটার , যদিও টার্গেট ছিল মাথাতে । বাকিটা পুন্নু দৌড়িয়ে লাঠিপেটা করে সেরে ফেলে । রাতে বেশ ভোজন হবে তাতে পুন্নু বেজাই খুশি আর আমি জীবনের প্রথম শিকার করে, হোক না লাঠিপেটা করে, এতেই খুশি । খুশিমনে ফিরলাম বাংলোতে ।
জ্যোতি পানি খাওয়াওতো । বলে জ্যোতিকে ভেতরে পাঠালাম । রাসেলও আমাদের গল্প শুনছিল বেশ আগ্রহভরে । ওর আর লাকির বিয়ের পর আমার সাথে ওর দ্বিতীয় দেখা । সম্পর্কে শালা বোনাই হলেও লাকি আবার রকির থেকে ছোট, যার কারণে একটু কেমন কেমন হয়ে গেছে । রকি অবশ্য রাসেল নামেই ডাকে, কিন্তু আমি রকির বন্ধু মানুষ একটু বাধো বাধো অবস্থা । বাধো বাধো হতে হতে অবশ্য তাদের একখানা মেয়ে হয়ে গেছে ততদিনে । পানির গ্লাসে চুমুক দিলাম। ক্ষই ভাজতে বীন বাজিয়ে ফেললাম । গল্পে ফিরি,
সে রাতে আসলে, সন্ধ্যা থেকে লোডশেডিং । কারেন্ট আসে বটে থাকে না । আগের দিন ভাল দেখছি পরের দিন পুরো উলটা । সন্ধ্যা হতে হতে পাহাড়ি এলাকা, তাও আবার বনের মাঝে, দ্রুতই অন্ধকার হয়ে আসে । মোমবাতি জালান হল যেখান যেখানে লাগে আর কি । জেনারেটর ছিল, কিন্তু অরিজিত আবার হিসেবি মানুষ, মোমবাতি দিয়ে সাশ্রয় করছিল আর কি । আর তাতেই বিপত্তি ঘটে সে রাতে । ঘরে বসে না থেকে অরিজিত আর আমি বের হলাম বাইরে অন্ধকারে হাটতে । বাংলোতে কেবল একা পুন্নু, আর গার্ড থাকলেও বিপদ আপদ ছাড়া ভেতরে যেতে মানা । বের হয়ে টিলা খুজে তার মাথাতে দুজন গ্যাট বয়ে বসে পড়লাম ।
গল্পে গল্পে রাত আটটা তো বেজে গেছিল মনে হয় । বাংলোতে ফিরে রাতের খাবার দেখি সাজান । আমি বেশ উত্তেজিত , নিজের হাতের প্রথম শিকার রান্না খাব । এতকিছুর মধ্যে পুন্নুর হাতে যে ব্যাণ্ডেজ তা খেয়াল করি নি আমরা দুজনে, তারপরেও আলোর স্বল্পতা । খেয়াল করলেই ভাল ছিল । পুন্নু সযত্নে ভাত তরকারি বেড়ে দিতে শুরু করেছে ততক্ষণে। বেশ লাগছিল । মোমবাতির আলোতে বনের মধ্যে, বন মোরগের রান্নার সুগন্ধ । খেতে খেতে হটাত ছোট একটা হাড় আমার দাতে গেল বেধে ।বের করে হাতে নিয়ে সামনের মোমবাতির আলোতে ধরলাম । ভ্রু কুচকে কি জিনিস চেনার চেষ্টা করছি, মনে হল পাশে দাড়ান পুন্নুর দম আটকেছে । অরিজিতও টেবিলের ওপাশ থেকে খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে । আমি বোঝার চেষ্টা করতেছি, কি ধরনের হাড় এটা । পুন্নু বলে উঠল,
বাবু আমি দেখি ? বলে হাত বাড়াল । আমরা দুজনে বেশ অবাক । পুন্নুর হাতে ওটা দিলাম । ভেতরে ঢুকে পুন্নু আরেকটা মোমবাতি বাম হাতে ধরে নিয়ে আসল, তখন খেয়াল করলাম ওর বাম হাতের কড়ে আঙ্গুলের মাথেতে ব্যাণ্ডেজ । ডানহাতে রাখা আমার দেয়া হাড়েরটুকরো দেখে পুন্নু চমকে গেল । অরিজিত এগিয়ে আসল সামনে । বুঝতে না পেরে জিগেস করেই বসল কি ওটা পুন্নু? পুন্নু যে চমকিত আর হতবম্ভ বোঝা যাচ্ছিল । এবার সে কম্পিত স্বরে উত্তর দিল সাহেব আমার আঙ্গুললের মাথা !
সামনে বসা সবগুলোর যে চোখ কপালে বলে দিতে হবে না । রকি আর রাসেল না পেরে একসাথেই বলে উঠল, কি ভাবে, কেমনে । আর মেয়েগুলো মনে হল বমি করে ফেলবে ।
আমি হাসলাম । আরে সিরিয়াস কিছু না । সে রাতে পুন্নু বেচারা বনমোরগের শক্ত হাড় কাটতে গিয়ে দা দিয়ে কোপাচ্ছিল । এমিনিতে কম দেখে সে রাতে । তার উপরে মোমবাতির আলোতে ভুল করে তার বাম হাতের কড়ে আঙ্গুলের মাথা, মানে নখের অংশটুকু কাটা পড়ে । পরে তার চিল্লাচিল্লি শুনে গার্ড দুজন এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে যায় বটে কিন্তু কাটা পড়া আঙ্গুলের বাকি অংশ খুজে পায় নি। আসলে কাটা অংশ পড়ে গিয়েছিল মাংশের গামলাতে । একদিক দিয়ে ভাল হয়েছিল, পুন্নুর আর কোন্দিন বাম হাতের কড়ে আঙ্গুলের নখ কাটা লাগবে না ভবিষ্যতে । আর আমি মানুষের হাড় মাংশের স্বাদ পেলাম ফোকটে ।
মেয়েদুটোর চেহারাতে এতক্ষণে রঙ ফিরছে । লাকি শুধু জিজ্ঞেস করে ফেলল, ওটা খেয়ে আপনার কিছু হয় নি ভাইয়া?
আমি অট্টহাস্য দিলাম বেশ খানিকটা, হা তা হয়েছিল বৈকি ! নখ খেয়ে পেটের বারো বেজে গিয়েছিল । আর তারপর থেকে দেখছ অবস্থা, গায়ে গতরে লাগে না কিছু !
বর্তমানে ফেসবুকিং !
অথবা,
বেশতো সাইট টিতে কোনো কন্টেন্ট-এর জন্য বেশতো কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
কনটেন্ট -এর পুরো দায় যে ব্যক্তি কন্টেন্ট লিখেছে তার।