বিডি আইডল
প্রশ্ন করেছেন


পাঙন সম্প্রদায়কে কিছু কথা
মণিপুরীদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারী সম্প্রদায়টি "পাঙন" বা "পাঙ্গান" বা মণিপুরী মুসলিম হিসাবে পরিচিত। বাংলাদেশের সিলেট, মৌলবীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার নানান স্থানে প্রায় পঁচিশ হাজার মণিপুরী মুসলিম বাস করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পাঙনরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য ও ঐতিহ্য আজো বজায় রেখেছে। তাদের ঘরবাড়ি, পোষাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা স্বতন্ত্র এবং বৈচিত্রে ভরপুর.
পাঙনরা সুন্নী মুসলিম। ধর্মীয় বিশ্বাস এক হলেও স্থানীয় বাঙালী মুসলিম জনগোষ্ঠির সঙ্গে পাঙনদের সামাজিক কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাদের ধর্মাচরন, সমাজব্যবস্থা ও রীতিনীতির সাথে বাঙালী মুসলমানদের যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে। পাঙনরা প্রচন্ড ধর্মভীরু ও রক্ষনশীল। পাঙন মেয়েরা কঠোর পর্দপ্রথা মেনে চলে। নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বৈবাহিক সম্পর্ক পাঙন সমাজ অনুমোদন দেয়না। পাঙনদের মসজিদগুলোতে কেবল পাঙন ইমামরাই ইমামতি করতে পারেন। নানান সামজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা মাতৃভাষা ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ত্ব দিয়ে থাকে। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে কোরান শরীফের তর্জমা ও তাফসীর, বিভিন হাদিসের পাঠ ও ব্যাখ্যা সবকিছু মাতৃভাষায় করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিয়ের দিনে "কাসিদা" নামে পরিচিত এক ধরনের লোক ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান ও নাচের অনুষ্ঠান থাকে যা পাঙনদের একান্ত নিজস্ব।
ঈদ পাঙনদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। ঈদের দিনে পাঙন মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পড়ে দল বেঁধে আত্মীয় স্বজনের বাড়ী বেড়াতে যাওয়ার দৃশ্য চেয়ে দেখার মতো।
পাঙন জাতির নৃতাত্ত্বিক বিবর্তনের ইতিহাস মণিপুরীদের অপরাপর শাখা বিষ্ণুপ্রিয়া ও মৈতৈদের থেকে আলাদা যদিও তিনটি জনগোষ্ঠিই অষ্টাদশ শতাব্দিতে আদিভূমি মণিপুর ত্যাগ করে বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসতি গড়ে তোলে
পাঙনরা প্রচন্ড পরিশ্রমী জাতি। ভিক্ষাবৃত্তিকে এরা মনুষ্যজন্মের নিকৃষ্ট পেশা বলে মনে করে। কৃষিকাজ ছাড়াও তারা বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি ও আসবাব তৈরীতে দক্ষ। পাঙন মেয়েরা কৃষিকাজে পুরুষের সমান পারদর্শী। এছাড়া কোমর তাঁতে কাপড় বোনা এবং সুচীকর্মে পাঙন মেয়েদের অসাধারন দক্ষতা রয়েছে। মণিপুরীদের পরিধেয় ফানেক বা চাকসাবির উপর পাঙন মেয়েদের সুঁই সুতার সুক্ষ কারুকাজ দেখলে বিষ্মিত হতে হয়।
''যদি পাঙনদের সম্পর্কে পুরোপুরি লিখা এইখানে শেষ করা যাবে না''


ভাষাগত এবং ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে বাংলাদেশের মণিপুরীরা তিনটি শাখায় বিভক্ত এবং স্থানীয়ভাবে তারা (১) বিষ্ণুপ্রিয়া, (২) মৈতৈ ও (৩) পাঙন নামে পরিচিত। মণিপুরের অধিবাসীদের মধ্যে এই তিনটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের শিকার হয় এবং তারা বাংলাদেশে এসে পাশাপাশি বসতি স্থাপন করে। পাঙনরা আর্য বংশদ্ভুত হলেও মৈতৈ ভাষায় কথা বলে এবং ধর্মীয়ভাবে তারা মুসলিম। বাংলাদেশের সিলেট, মৌলবীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার নানান স্থানে প্রায় পঁচিশ হাজার মণিপুরী মুসলিম বাস করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও পাঙনরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ঠ্য ও ঐতিহ্য আজো বজায় রেখেছে। তাদের ঘরবাড়ি, পোষাক-পরিচ্ছেদ, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা স্বতন্ত্র এবং বৈচিত্রে ভরপুর। মণিপুরে মুসলমানদের সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ অভিভাসন ঘটে মুঘল আমলে। সে কারনে ইতিহাসবিদদের ধারনা "পাঙন" শব্দটি এসেছে "পাঙ্গাল" শব্দ থেকে যার উৎপত্তি "মুঘল" থেকে (পাঙ্গাল>মুঙ্গাল>মুগাল এভাবে)। অনেকে আবার পাঙ্গাল শব্দটিকে "বাঙ্গাল" শব্দের বিবর্তিত রূপ বলেও মনে করেন। পাঙনরা প্রচন্ড পরিশ্রমী জাতি। কোমর তাঁতে পাঙন মেয়েদের দক্ষতা অসাধারন, এমনকি পাঙন নারী কৃষিকাজে পুরুষের সমান পারদর্শী l কৃষিকাজ ছাড়াও তারা বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি ও আসবাব তৈরীতে দক্ষ। পাঙনরা সুন্নী মুসলিম। ধর্মীয় বিশ্বাস এক হলেও স্থানীয় বাঙালী মুসলিম জনগোষ্ঠির সঙ্গে পাঙনদের সামাজিক কোন সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তাদের ধর্মাচরন, সমাজব্যবস্থা ও রীতিনীতির সাথে বাঙালী মুসলমানদের যথেষ্ঠ পার্থক্য রয়েছে। পাঙনরা প্রচন্ড ধর্মভীরু ও রক্ষনশীল। পাঙন মেয়েরা কঠোর পর্দপ্রথা মেনে চলে। নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরে বৈবাহিক সম্পর্ক পাঙন সমাজ অনুমোদন দেয়না। পাঙনদের মসজিদগুলোতে কেবল পাঙন ইমামরাই ইমামতি করতে পারেন। নানান সামজিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তারা মাতৃভাষা ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ত্ব দিয়ে থাকে। তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে কোরান শরীফের তর্জমা ও তাফসীর, বিভিন হাদিসের পাঠ ও ব্যাখ্যা সবকিছু মাতৃভাষায় করা হয়ে থাকে। এছাড়া বিয়ের দিনে "কাসিদা" নামে পরিচিত এক ধরনের লোক ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান ও নাচের অনুষ্ঠান থাকে যা পাঙনদের একান্ত নিজস্ব। ঈদের দিনে পাঙন মেয়েদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক পড়ে দল বেঁধে আত্মীয় স্বজনের বাড়ী বেড়াতে যাওয়ার দৃশ্য চেয়ে দেখার মতো।


পাঙন (মণিপুরী) সম্পর্কে ।। - মণিপুরীদের ‘পাঙন’ শাখাভুক্ত লোকেরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলমান। পাঙন সম্প্রদায় দুইটি প্রধান শাখায় বিভক্ত। যথা-ইনখুল ময়ুম এবং খুনজা। এই দুই প্রধান গ্রোত্রের মধ্যে উপগোত্রও রয়েছে। যেমন ইনখুল ময়ুম গোত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপগোত্র হল চারটি, যথা- কেনাউ, মোইচিং, সাজবোম ও ইফম প্রভৃতি। অনুরূপভাবে খুনজা গোত্রের উপগোত্রগুলোর মধ্যে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য মকক্, মরিবম ও খুলাক্পম প্রভৃতি। পাঙন সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি নিয়ম প্রচলিত যে, একমাত্র মামাত ও ফুফাত ভাই- বোনদের মধ্যে এদের বিবাহকর্ম সীমাবদ্ধ। মামাত ও ফুফাত ভাই-বোন ছাড়া অনুরূপ সম্পর্কিত অন্যান্য আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এমনকি অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গেও তাদের কোনো বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপিত হয় না। - এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের তংচঙ্গ্যাদের প্রভূত মিল পরিলক্ষিত হয়। তংচঙ্গ্যারাও মামাত ফুফাত ভাই-বোন ছাড়া এরূপ সম্পর্কযুক্ত অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না।ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও তাদের সামাজিক জীবনে কতকগুলো আদিবাসী বিশ্বাস এখনও রয়েছে এবং এই বিবাহপদ্ধতি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এখানে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যদি কোনও যুবকের মামাত বোন কিম্বা যুবতীর ফুফাত ভাই না থাকে কিম্বা ফুফাত বোন বা মামাত ভাই না থাকে তবে তাদের পক্ষে চিরকুমার বা চিরকুমারী ব্রত অবলম্বন ছাড়া উপায় থাকে না। পাঙন’রা খুব ধর্মভীরু। তবে ধর্মভীরু হলেও তারা ধর্ম সম্বন্ধে খুব উদার মনোভাবসম্পন্ন এবং পরধর্মসহিষ্ণু। এ কারণেই মৈতেই মণিপুরীদের সঙ্গে তাদের সম্ভাব চিরকালের। যাহোক, যদি কোনও পাঙন সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তির দুই বা ততোধিক পুত্রসন্তান থাকে তবে তাদের একজনকে তারা অবশ্যম্ভাবীভাবে লখনৌ, দেওবন্দ কিংবা রামপুরে পাঠাবে আরবি-ফারসি কিংবা কুরআন-হাদীস-ফিকহ সম্পর্কিত শিক্ষালাভ করার জন্য। দেশে ফিরে তাঁদের কাজ হলো ইসলামের অমিয়বাণী অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সন্দেহ নেই, প্রাচীনকালে তারা তাদের অন্যান্য শাখার অধিবাসীদের মতো জড়োপাসনা করত এবং তাদের মতোই জীবন-যাপনে অভ্যস্থ ছিল। সম্ভবত আফগানরা এদেশে আগমনের পর তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়।
