দেশ ও মানুষের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ফরিদুর রেজা সাগরকে ২০১৫ সালের একুশে পদক দিচ্ছে সরকার। রোববার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয় গণমাধ্যমে একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি তার হাতে এ পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
তার নামের সাথেই মিশে আছে সাগরের উচ্ছ্বলতা। বৃহৎ পরিসরে কিছু একটা করার জন্যই বুঝি এই সাগরের বেড়ে ওঠা। আর তাইতো তার লেখনীর গাঁথুনীতে খুঁজে পাওয়া যায় দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভাবনার পরিপক্ক সাঁতার। তিনি ফরিদুর রেজা সাগর। তার চিন্তায়, মেধায় ও মননে রয়েছে দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা। শিশুদের নিয়ে, দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি নিয়ে তার লেখনীতে স্পষ্ট হয় দেশপ্রেম। ফরিদুর রেজা সাগরের জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫। শিশু সাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার খ্যাতি দু’দশকেরও বেশী সময় ধরে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি তার লেখা বেশ কয়েকটি নাটকও টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। প্রায় সারা জীবনই তিনি টেলিভিশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড, চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বের পাশাপাশি নিজেকে লেখালেখিতে সম্পৃক্ত রেখেছেন।

প্রায় শতাধিক গ্রন্থের লেখক ফরিদুর রেজা সাগরের লেখা ‘ছোট কাকু সিরিজ’ ছোট বড় সকলের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বড়দের জন্যও লিখেছেন নানা ধরণের বই। ভ্রমণ বিষয়ক গ্রন্থ ‘ভ্রমণ ভ্রমিয়া শেষে’ ছাড়াও বাংলাদেশের টেলিভিশন ব্যবস্থা নিয়ে তথ্যভিত্তিক স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘একজীবনে টেলিভিশন’, ‘টেলিভিশন জীবনের সঙ্গী’, টেলিভিশন আরেক জীবনে ও টেলিভিশন ভাবনা বই ৪‘টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। তার লেখা ‘এক জীবনে টেলিভিশন’ বইটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এছাড়া তার লেখা কিশোর সমগ্র গ্রন্থ বেরিয়েছে সাতটি।
ফরিদুর রেজা সাগরের পিতা মরহুম ফজলুল হক এদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ছিলেন। মা রাবেয়া খাতুন দেশের প্রতিথযশা কথাসাহিত্যিক। ফরিদুর রেজা সাগর বাংলা একাডেমীর একজন ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের স্থাপনা সদস্য ও ছায়ানটের কার্যকরী সদস্য। ছোট বেলা থেকে কেন্দ্রীয় কচিকাচার মেলা এবং বর্তমানে বিভিন্ন শিশু সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত, এসব সংগঠনের তিনি চ্যারিটি মেম্বার।
শিশু সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, অগ্রনী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, রোমেনা আফাজ স্মৃতি স্বর্ণ পদক, টেনাশিনাস পদক ও ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার। চলচ্চিত্র প্রযোজনার জন্য পেয়েছেন দেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বিদেশে নানা সম্মাণনা ও পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনা, নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বাচসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন তাকে পুরস্কারে ভুষিত করেছে। তাঁর অর্জিত পুরষ্কারের ঝুলিতে সর্বশেষ যুক্ত হল দেশের সর্বচ্চো সম্মাননা পদক 'একুশে পদক-২০১৫' (সংগ্রহীত)