ছোটবেলা যাদের মুগলি না দেখে কেটেছে, তাদের জন্য সত্যি বলতে আমার একটু মায়া হচ্ছে l মন খারাপ হচ্ছে এই ভেবে যে, এত সুন্দর শিক্ষনীয় বিনোদনে বিনোদিত হতে পারেন নি বলে l জানি মুগলির কাহিনী সবারই জানা মোটামোটি, তবুও যদি কারো জানা থেকে থাকে বা হয়ত অনেকের স্মৃতিতে তা ঝাপসা পরে গেছে সে কারণে ভাবছি একটু লেখাই যেতে পারে মুগলি নিয়ে, তাই না ! মুগলি একই সাথে বিনোদনমূলক এবং শিক্ষামূলক কার্টুন, তাই এই কার্টুনটি সবারই দেখা উচিত। চলুন মুগলির জগতে পা বাড়াই....মুগলির টাইটেল সং গাইতে গাইতে ......
মুগলির সূচনা সঙ্গীতটা ছিল অসাধারণ -
জঙ্গলে ভোর হলো
আজ নতুন প্রভাত এলো,
খুশিতে ভরে গেলো চারিদিক!!!
তাক ধিনা ধিন ধিন তাক তাক ধিনাক ধিনাক ধিন!!!
সবুজ ঘাসের পরে
শিশির পড়ে ঝরে
খুশিতে ছেয়ে গেল চারিদিক।
তাক ধিনা ধিন ধিন তাক তাক ধিনাক ধিনাক ধিন!!!
এক দম্পতি তাদের শিশু সন্তান মুগলিকে নিয়ে জঙ্গলের ধারে নদীর তীরে এসেছিল সেখানকার পানিতে দূষণের মাত্রা পরিমাপ করার জন্য। কিন্তু কে জানত ঐ দিনই তাদের সন্তান তাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে এবং বনের নেকড়েদের দ্বারা লালিত পালিত হয়ে জঙ্গলের সকল প্রাণীদের নিকট নেকড়ে বালক মুগলি নামে প্রসিদ্ধ হবে। মুগলির বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ''ভালু'' নামে একটি ভাল্লুক, ''কা'' নামে একটি অজগর এবং ''বাঘিরা'' নামে একটি কালো চিতাবাঘ আর শত্রু ছিল ''শের খান'' নামে একটি রয়েল বেঙ্গল থুড়ি ইন্ডিয়ান টাইগার এবং শের খানের সঙ্গী হায়েনা তাবাকি। মুগলির অস্ত্র ছিল বুমেরাং। পরণে থাকত শুধু একটা নেংটি, আর কিছু না।

মুগলির একেবারে শুরুর দিকে মুগলির মানুষ মা বাচ্চা মুগলিকে বলে, ''আমাদের ঘর ছোট্ট একটি গ্রহতে অবস্থিত। এই গ্রহ আমাদের সকলকে কোলে নিয়ে ঘুরছে এবং এই বিশাল ব্রহ্মান্ডে জীবনের উপস্থিতির পরিচয় বহন করছে। এই গ্রহে অনেক জীবজন্তু রয়েছে যারা বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি করে না। কোন জীব মাংসাশী হয় আবার কোন জীব শাকাহারী হয়। কিন্তু এরা সবাই মিলেমিশে থাকে। আমরা সকল প্রাণী, গাছপালা যে গ্রহতে একসাথে বাস করি তাকে পৃথিবী বলে। জানোয়ার এবং মানুষ সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে নিজের স্বার্থের জন্য এই সুন্দর জঙ্গল নষ্ট না হয়ে যায়।'' তখন মুগলির বাবা মুগলির মাকে বলে, ''ছাড় তো, ও এখনো বাচ্চা। এসব বড় বড় কথা বুঝার বয়স এখনো ওর হয় নাই। আবাদি এবং সভ্যতা থেকে অনেক দূরে কি পরম নিশ্চিন্তেই না ঘুমাচ্ছে। ভয় কাকে বলে সে জানেই না।'' তখন মুগলির মা আবার বলে,''বড় হয়ে আমাদের ছেলে আমাদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে চলবে এবং এই জঙ্গলের সাথে বন্ধুত্ব করে প্রকৃতিকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাবে।'' পিতামাতার পদচিহ্ন অনুসরণ না করলেও মুগলি জঙ্গলের সাথে বন্ধুত্ব ঠিকই করেছিল এবং প্রকৃতিমাতাকে রক্ষাও করেছিল স্বার্থপর মানুষের হাত থেকে।

শেষ দিন মুগলি জঙ্গল ছেড়ে জঙ্গলের কাছেই এক গ্রামে এক মানুষ পরিবারের সাথে বসবাস করতে শুরু করে। জঙ্গলের সমস্ত নিরীহ এবং হিংস্র পশুপাখি ঐ দিন চোখের জলে মুগলিকে বিদায় জানাতে আসে আর মুগলিও জঙ্গলের সকল প্রাণীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সদা সর্বদার জন্য মানুষদের কাছে চলে যায়। খারাপ মানুষদের দমন করে ভাল মানুষদের রক্ষা করে জংলী বালক মুগলি বুঝিয়ে দিছে যে মানুষকে মানুষ হিসেবে কতটা সভ্য হতে হয়।
৯৪/৯৫ এর দিকে আমাদের প্রায় কারো বাসাতেই ডিশ কানেকশন ছিল না। তাই বিটিভিই ছিল একমাত্র সম্বল। কাজেই শুক্রবার বিটিভির এই অনবদ্য আকর্ষণ সারা সপ্তাহ জুড়েই মনকে জাগিয়ে রাখত।